৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথস্থল ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের আশ-পাশে বিরোধীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের মাঝেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক ঘটলো মার্কিন এ ধনকুবেরের।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা দুটি সহজ নিয়ম অনুসরণ করবো। তিনি বলেন, মার্কিন পণ্য কিনো ও মার্কিনিদের চাকরি দাও।’ ১৯৭৭ সালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের পর এই প্রথম সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত (১৪৫৩ শব্দের) ভাষণ দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মূল ও সংক্ষিপ্ত স্লোগান ছিল আমেরিকাই প্রথম। সবার আগে আমেরিকা।
তিনি বলেছেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, কর, অভিবাসন ও পররাষ্ট্র বিষয়ে প্রত্যেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে মার্কিন শ্রমিক ও পরিবারগুলো রক্ষা করার জন্য।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের শপথকে ‘সব মার্কিনিদের কাছে আনুগত্যের শপথ’ বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্প যখন ক্যাপিটল ভবনে অভিষেকের ভাষণ দিচ্ছিলেন; সেই সময় বাইরে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় বিরোধীদের। অনেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভবনের কাঁচ ও গাড়ি ভাঙচুর করেছেন।
জয় আপনাদের
শপথ নেয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এই দিনটি আপনাদের। এই বিজয় আপনাদের, যুক্তরাষ্ট্রের।’
শপথের পর চারটি টুইট করেছেন ট্রাম্প। সেখানে লিখেছেন, ‘আজ আমরা শুধুমাত্র এক প্রশাসন থেকে অন্য প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করছি না অথবা এক পার্টি থেকে অন্য পার্টির কাছেও নয়, আজ আমরা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে… ক্ষমতা হস্তান্তর করছি, ফিরিয়ে দিচ্ছি আপনাদের কাছে, মার্কিন জনগণের কাছে।
ট্রাম্প টুইটে বলেছেন, আমাদের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনব, সীমানা ফিরিয়ে আনব, সম্পদ ফিরিয়ে আনব, আমাদের স্বপ্ন ফিরিয়ে আনব।
এর আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শপথ বাক্য পাঠ করান। ট্রাম্পের হাতে ছিল আব্রাহাম লিংকনের বাইবেল। এ সময় ট্রাম্পের পাশে ছিলেন স্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে শপথ বাক্য পাঠ করান বিচারপতি ক্লেরেন্স টমাস। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বাইবেল হাতে নিয়ে শপথ পড়েছেন পেন্স।
শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে বাইবেলে হাত রেখে প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নেন মার্কিন এ ধনকুবের। শপথের পরে ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে সমৃদ্ধশালী করবো। আমরা আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে মহৎ করবো। এবং হ্যাঁ আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে মহৎ করবো।’
দেশে দেশে বিক্ষোভ, ব্যতিক্রম রাশিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে রাশিয়া ছিল ব্যতিক্রম। সেখানে দ্বিতীয় দিনের জন্য আনন্দ উৎসব করেছেন তার একদল সমর্থক। তাদের আশা ট্রাম্পের শাসনামলে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে।
লন্ডনে টাওয়ার ব্রিজের ওপর ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় যাতে লেখা ছিল, বিল্ড ব্রিজেস, নট ওয়ালস- অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্ত দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেবেন বলে যে হুমকি দিয়েছিলেন তার প্রতি ইঙ্গিত করে এতে বলা হয়েছে, দেয়াল তৈরি না করে সেতু নির্মাণ করুন।
বিক্ষোভকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বের জন্য এক বিরাট হুমকি বলে বর্ণনা করেন। ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেও। ট্রাম্পের শপথ ঘিরে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটনও।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, দেশটির উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিরাসহ আরও অনেকে।
বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়ায় নিহত ১১
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ডিসিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিরোধীরা। এ সময় অন্তত একশ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ।
ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র সিন কনবয় বলেছেন, আমরা প্রায় ৯৫জনকে আটক করেছি। ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংসের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্পের শপথের দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে অন্তত ১১জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন। তবে পুলিশ এ তথ্য অস্বীকার করেছে।
নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের রাইভারস রাজ্যে ওই মিছিল হয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা নাইজেরিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করছেন। স্বাধীনতার জন্য ট্রাম্পের সমর্থন চেয়ে আসছেন তারা।
শুরুতেই সংস্কারের পথে হাঁটলেন ট্রাম্প
শপথ নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে দেয়া ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যার বেশিরভাগেরই মিল নেই। দেশটির প্রবীণ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য তার সরকারের বিশেষ গুরুত্বারোপের অঙ্গীকার করা হলেও শপথ নেয়ার কিছুক্ষণ পরই সেই অঙ্গীকারের উল্টো চিত্র দেখা গেছে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইটের প্রবীণ সেনা কর্মকর্তাদের পেইজে লেখা হয়েছে, অযোগ্য এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্তের মাধ্যমে আমাদের সংস্কার শুরু হবে। এই পেইজের শিরোনাম করা হয়েছে ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে আবারো শক্তিশালী করা হবে।’
নির্বাচনের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো সংস্থার চেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে ছিল দেশটির দ্য ডিপার্টমেন্ট অব ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স। এই ডিপার্টমেন্টের অনেক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিল সাক্ষর
শপথ নেয়ার পরপরই প্রথম বিলে সাক্ষর করেছেন মার্কিন এ ধনকুবের। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নিয়োগের পথ নিশ্চিত করা হয়। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে কংগ্রেসে ট্রাম্পের সাক্ষর করা একটি বিল পাস হয়। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জেনারেল জেমস ম্যাটিসকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয় বিলে।
ম্যাটিসকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের বিলটি সিনেটে আজ আরো পরের দিকে উঠবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি।
এদিকে ট্রাম্পের অভিষেক বক্তৃতার কয়েক মিনিট পর হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সব তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, ডেইলি মেইল।
পাঠকের মতামত