স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে যেসব রোহিঙ্গা সৌদি আরব গেছেন মেয়াদ শেষে শুধু তাদেরগুলো নবায়ন করা হবে। সব রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করা হবে না। একই সঙ্গে সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবে সৌদি আরব সরকার। দেশটির সঙ্গে সিকিউরিটি কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট ও রোড টু মক্কা সার্ভিস নামে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এর আওতায় হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন, পাসপোর্ট ও ব্যাগ তল্লাশি হবে বাংলাদেশে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন। এ সময় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে তিন লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বসবাস করছে। তারা নিজস্ব ম্যকানিজমে সৌদিতে গেছেন। তবে কিছু রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেদেশে গেছে। সৌদি প্রতিনিধিদল আমাদের বলেছেন,তাদের দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দ্রুত নবায়ন করতে। আমরা বলেছি তাদের দেশে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করা যাবে না। শুধু যারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সে দেশে গেছে তাদের পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই শেষে নবায়ন করবে সরকার। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রায় তিন প্রজম্ম বর্তমানে সৌদি বসবাস করছে। তাদের অনেকে পাকিস্তানের পাসপোর্ট ব্যববহার করে সেখানে গেছে। সুতরাং আমরা তো সবার পাসপোর্ট নবায়ন করব না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দেওয়া নিয়ে কথা বলেনি। যারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদিতে গেছে তাদের পাসপোর্ট দ্রুত নবায়নের কথা বলেছে। যারা বিশেষ বিবেচনায়, বিশেষভাবে গিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে, আমরা যাদের পাসপোর্ট দিয়েছি, তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার ব্যাপারে তো আমরা ওয়াদাবদ্ধ। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা দেখব। আমাদের পাসপোর্ট হোল্ডারদেরই প্রাধান্য দেব, এর বাইরে কিছুই করব না। সিস্টেমওয়াইজ আমরা পাসপোর্টগুলো নবায়ন করছি। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হচ্ছে। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি হতে যাচ্ছে। যেসব সমস্যা সুরাহা করা যায় ওই কমিটি সুরাহা করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সিকিউরিটি কো-অপরেশন অ্যাগ্রিমেন্ট করেছি। সাইবার অপরাধ দমনে দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করবে। প্রশিক্ষণ ও তথ্য আদান প্রদান হবে এই চুক্তির আতায় । নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যাদি এক দেশ অপর দেশকে দেবে। রোড টু মক্কা সার্ভিসের সমঝোতার আগে মৌখিকভাবে কাজ করেছে দুই দেশে। এখন আমরা সমঝোতা স্মারক করেছি। এই সমঝোতার আওতায় আমাদের হাজিদের ইমিগ্রেশন, পাসপোর্ট ও ব্যাগ তল্লাশি হবে বাংলাদেশে। সৌদিতে তাদের কোনো ইমিগ্রেশন মোকাবিলা করতে হবে না। হাজিরা জেদ্দায় বিমান থেকে নেমে সোজা গন্তব্যে চলে যাবেন।
মন্ত্রী আরও জানান, সৌদি আরবে প্রায় ২৭ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এর অধিকাংশই শ্রমিক। তারা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে বলেছেন। দক্ষ শ্রমিক পাঠালে তারা আরও ভালো আয় করতে পারবে। সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবে। আমরা বলেছি সরকার ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছে। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষিত শ্রমিক পাঠানো যাবে। অনেক বাংলাদেশি সেখানে ব্যবসাও করছেন। আমরা বাংলাদেশি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সহায়তা চেয়েছি।