চলতি বছর কেন্দ্রীয়ভাবে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। স্ব স্ব স্কুলে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, আমরা পিইসি প্রস্তাবের সার সংক্ষেপ পাঠিয়েছিলাম, তাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা এবং মাদরাসার ইবতেদায়ী পরীক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে তাহলে কি সিদ্ধান্ত হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: এ বছর হচ্ছে না পিইসি পরীক্ষা
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, চলতি বছর ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দিন বিষয়ভিত্তিক পাঠদান দেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। এ ছুটির মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে সংসদ টেলিভিশনে চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু অনেকের শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন না থাকায় এবং থাকলেও ক্যাবল সংযোগ নেই। তাই সব শিক্ষার্থীকে এ প্রোগ্রামের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। সে বিবেচনায় ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এতে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবক মোবাইল ও রেডিওর মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে পারছেন। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি পাঠ (নেপ) ও বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটির (বেডু) পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-ইবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়গুলো খোলা না হলে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ দুই স্তরের অবশিষ্ট পাঠদান শেষ করা সম্ভব হবে না।
সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করা হবে। উভয় পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো পাঠ্যবইয়ের ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পাঠ কমেছে। করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগে পাঠ্যক্রমের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পড়ানো হয়েছে। আগের ও পরের পঠিত মোট পাঠ্যক্রমের ওপর ডিসেম্বরের শেষের দিকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।