রেজাউল করিম চৌধুরী::
স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ দরকারি হলেও, এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগটাই প্রধানত প্রয়োজন। আমরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাদির জন্য (যেমন, বিদ্যুৎ, পানি, সড়ক এবং বৈদ্যুতিক যোগাযোগ) বেসরকারি খাতের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি না। সর্বজনীন সত্য হলো- বেসরকারি খাত কাজ করে মুনাফা লাভের জন্য এবং আর রাষ্ট্র সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে জনকল্যাণে কাজ করে।
বিশাল আশা নিয়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন আমরা জানি তাদের শোচনীয় পরিস্থিতি। একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনগুলো পরিষ্কার করার জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটও অপ্রতুল। কখনও কখনও সেখানে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এটি চালানো ও ঠিকঠাক রাখতে যথেষ্ট বাজেট থাকে না। উপযুক্ত ক্ষমতাসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। অন্তত স্বাস্থ্য খাতটিতে আর আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখতে চাই না। জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে একটি বিশেষ কমিশন গঠনের বিষয়টি সম্ভবত আমাদের ভেবে দেখা দরকার।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী ডাক্তার থাকতে হবে। চিকিৎসকরা যাতে তাদের নিজের জেলা বা উপজেলায় কাজ করতে পারেন, সে জন্য সরকার ভাল সুযোগ- সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু এখনো উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে থেকে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা গড়ে উঠেনি। উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের কিছু সুযোগ সুবিধা আছে বৈকি, এই ব্যবস্থা ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকাও জরুরি।
কখনও কখনও রোগীদের স্বজনরা আইন হাতে তুলে নেওয়ায়, এমনকি সাধারণ সময়েও চিকিৎসকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন। সর্বোচ্চ স্তরের সুরক্ষা হলো চিকিৎসকদের মৌলিক অধিকার। আসুন আমরা চিকিৎসা পেশায় সম্পৃক্তদের সম্মান করি এবং তাদের কথাগুলো শুনি। আসুন আমরা স্বাস্থ্যখাতের জন্য ব্যাপকভাবে বাজেট বাড়ানোর দাবি করি। চারটি পর্বে এই লেখা যখন আমি শেষ করছি, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের জন্য বীমা সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য আরও বেশি চিকিৎসক, নার্স এবং টেকনেশিয়ান নিয়োগ দিতে হবে। সবসময় আমরা শুধু পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব থাকার খবর পড়ি, আমরা দেখতে চাই যে, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসা পেশায় প্রয়োজনের তুলনায় ১০% লোকবল উদ্বৃত্ত আছে! তরুণ চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমরা চিকিৎিসায় উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে কারো একচেটিয়া কর্তৃত্ব দেখতে চাই না।
এই জাতিকে রক্ষার সর্বোচ্চ সক্ষম সেনানী চিকিৎসায় পেশায় সম্পৃক্তদের জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগ চাই। এই করেনা সংকট থেকেও যদি আমরা শিক্ষা নিতে পারি, তবে আর কবে শিখবো?
রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট।
পাঠকের মতামত