পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের চাকরি সরকারি ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তিনি কর্মস্থলে ফিরবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে কর্মস্থলে ফেরা না ফেরা বাবুলের ওপর নির্ভর করছে না। তিনি কর্মের মাধ্যমে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেয় তা-ই তিনি মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। সূত্র বলছে, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হওয়ার পর থেকে বাবুল কর্মস্থলে যাননি। তিনি ছুটিতে আছেন কি না এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বাবুল নিজেও এ প্রসঙ্গে কিছু বলছেন না। ফলে বাবুল চাকরিতে আছেন কি নেই, তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই বাবুল রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ার ২২০/এ নম্বর শ্বশুরের বাসায়ই থাকছেন। এসপি বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাবুল পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করার কয়েক দিন পরই মিতু খুন হয়। এরপর বাবুল আর কর্মস্থলে যায়নি। বাবুল ছুটিতে আছে কি না জানি না। বাবুল চাকরি সম্পর্কে কিছু জানায়নি। সব সময় সে বাসায়ই থাকছে। চাকরি থেকে তাকে অব্যাহতি দেবে, নাকি চাকরিতে রাখবে তা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।’
শুক্রবার মিতু হত্যার ৪১ দিন ছিল। এ কারণে মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ার বাড়িতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। এতে অংশ নিতে বাবুলের মা-বাবা, ভাই-বোন গ্রামের বাড়ি মাগুরা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। বাবুল তার দুই সন্তান আক্তার মাহমুদা মাহির (৮) ও তাবাসসুম তাজমিন টাপুরকে (৫) নিয়েই সময় কাটাচ্ছেন। তবে তিনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বাবুল দুই সন্তানকে সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। তাদের খেলার সাথী হয়ে থাকছেন। লেখাপড়া যাতে বিঘ্নিত না হয় সে জন্য ক্লাসের বই পড়াচ্ছেন। তাদের এখনো স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। আরেকটু স্বাভাবিক হলেই স্কুলে ভর্তি করা হবে। ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং সেশন যাতে মিস না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। বাবুল নিয়মিত নামাজ এবং অবসর পেলেই বই পড়ছেন। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিতুকে আর ফিরে পাব না এটাই সত্য। কিন্তু তার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কাউকে যেন অহেতুক হয়রানি করা না হয় সেদিকে মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খেয়াল রাখবেন। মিতু হত্যার সঠিক বিচার দাবি করছি। ২৬ জুন বাসার সামনে থেকে পুলিশি নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসপি বাবুলসহ বাসার সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাবুল নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ২৪ জুন রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আবার শ্বশুরবাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। জানা গেছে, বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পদত্যাগপত্রে সই নেওয়া হয়। যদিও এখন পর্যন্ত পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা না করা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ সদর দফতর। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি মিডিয়াকে এড়িয়ে চলছেন।
তিন আসামি রিমান্ডে : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার তিন আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরা হলেন মিতু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া শাহজাহান, অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা এবং কিলিং মিশনের জন্য খুনি ভাড়া করা মুছা সিকদারের ভাই সাইদুল সিকদার ওরফে সাকু। রবিবার এ আদেশ দেন মহানগর হাকিম হারুন উর রশিদ। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। রবিবার রিমান্ড শুনানি শেষে তাদের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ সময় আসামিপক্ষের জামিন আবেদন ও রিমান্ড বাতিলের আবেদনও নাকচ করে দেন আদালত।’ মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রিমান্ড মঞ্জুরের পর আজ (গতকাল) মিতু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করা শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ সিএমপি সূত্রে জানা যায়, মিতু হত্যাকাণ্ডে সাত-আটজন অংশ নেন। এদের মধ্যে গ্রেফতার ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতে তারা উল্লেখ করেন, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়ার জন্য কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা সিকদার তাদের ভাড়া করেন। মুছা সিকদার, ওয়াসিম, আনোয়ার, নবী, রাশেদ, শাহজাহান ও কালু কিলিং মিশনে অংশ নেন। এদের মধ্যে মুছা, নবী ও ওয়াসিম সরাসরি অংশ নেন কিলিং মিশনে। ভোলা অস্ত্র সরবরাহ করেন। মুছার পরিবার দাবি করে আসছে, ২২ জুন বন্দর এলাকা থেকে পুলিশ মুছাকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করে বলে আসছে, মুছাকে হন্য হয়ে খোঁজা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
- bd-pratidin