ডেস্ক রিপোর্ট::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবসময় সর্তক থাকার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ২০০৮ সালের পর ২০১৪ সালে পুনরায় আমরা সরকার গঠন করি। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন, সত্যিকারভাবে উন্নয়নটা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারছে এবং উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র যেন স্থান না পায় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশকে নানামুখী সঙ্কট মোকাবিলা করতে হয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, অপশাসন ও দুঃশাসন, দীর্ঘ সময় ধরে গণতন্ত্রহীনতা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, সন্ত্রাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। এ সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আজ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভেতর একটা আস্থা, বিশ্বাস ফিরে এসেছে। এই আস্থা বিশ্বাস যেন মানুষের মনে থাকে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে এবং যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অটুট রাখাই সরকারের লক্ষ্য। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের শুধু রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে দায়িত্ব পালন না করে উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনকল্যাণে নিবেদিত হবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু রুটিন দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে আরো কি কাজ করলে মানুষের কল্যাণ হয় সেটা চিন্তা করে সেভাবেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আরেকটি বিষয় বলি-যেমন আপনারা একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের খুলনার জেলা প্রশাসক একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেখানে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং আমাদের পুলিশ প্রশাসন এক দিনের বেতন দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করেছেন ভিক্ষুক মুক্ত করার জন্য। এই ভিক্ষুকদের হিসাব নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এই বিষয়টি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি বলব— এতটা উদ্ভাবনী কাজ তারা করেছেন। কাজেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারাই এ ধরনের ফান্ড তৈরি করবেন সেখানে আমিও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে কিছু অনুদান দেব। সরকারের সাফল্যে সরকারি কর্মকতা-কর্মচারিদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পরিকল্পনা দিয়েছি। আপনারা মাঠ পর্যায়ে যারা এটি বাস্তবায়ন করেছেন তাদের সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই আর এটা অব্যাহত থাকুক সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের ফলে একদিকে মানুষের আচরণ এবং রুচিতে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাসহ সবকিছু বদলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল নথি নম্বর ও ই-ফাইলিং চালু করা হয়েছে। জনগণের অধিকার রক্ষার্থে সকল দপ্তরে দ্বিতীয় প্রজন্মের সিটিজেন চার্টার প্রবর্তন করা হয়েছে। এর আওতায় মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের সামনে এখন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি ক্যাটাগরিতে ১৪ জনকে পদক প্রদান করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোজাম্মেল হক খান বক্তব্য রাখেন।
সরকার শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ভবিষ্যত্ প্রজন্ম যেন বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পায় সেজন্য তার সরকার শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সর্্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। গতকাল রবিবার সকালে গণভবনে এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণকালে তিনি আরো বলেন, ‘এই বছর এইচএসসি’র রেজাল্ট একটু খারাপ হলেও আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলে এর গুণগত মানের দিকে সর্্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রয়োগ করেছি। সকল বিষয়ের প্রতি বিশেষ করে উত্তরপত্র মূল্যায়নে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।’
পরীক্ষায় পাস-ফেল নিয়ে না ভেবে শিক্ষার মান বাড়াতে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে এবং এই বয়সে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন দেয়া। এসময় ছেলেমেয়েরা যেন মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ছেলেমেয়েরা নিজেদের কথাগুলো যেন বন্ধুর মতো তার বাবা-মাকে বলতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ফলাফল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে পাসের হার কী ছিল, আর এখন কী? তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশের বিষয়টি একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছি। ফল পাওয়া নিয়ে এখন আর আগের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না। ঘরে বসেই এখন সবাই ফলাফল পেতে পারে। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন এবং অকৃতকার্যদের মন দিয়ে পড়াশোনা করে আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। তিনি বলেন, মানুষ হওয়াটাই মুখ্য, পাসের হার নয়। যারা ফেল করেছে তাদেরকে পড়ালেখার প্রতি উত্সাহ দিতে হবে।