উখিয়া নিউজ ডটকম::
আড়াই লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের অবলম্বন উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২৯ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হয়নি। বরং স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে ২ মাস ধরে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরকারি ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ হচ্ছে না। ‘আইওএম’ ও ‘রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’ আউটডোর রোগীদের তাদের নিজস্ব ওষুধ সরবরাহ দিলেও ইনডোরে ভর্তি নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীরা কোনো প্রকার ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের সেবাবঞ্চিত রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নানা রকম দুর্ভোগের চিত্র। এক বছর বয়সী শিশু আবরার ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে রাতযাপন করলেও কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন পিতা জালিয়াপালং গ্রামের মোহাম্মদ রিদুয়ান। তিনি জানান, রাতের বেলা বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ দেওয়া হয়না। যে কারণে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এভাবে আরো একাধিক রোগী ওষুধ, বিদ্যুৎ ও পানি না পাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তাদের অমানবিক সময় কাটাতে হচ্ছে। বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করে আনলেও প্রয়োগ করার মত ডাক্তার, নার্স পাওয়া যায় না।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের করণিক নুরুল আলম জানায়, পানি সরবরাহের জন্য আইওএম একটি সুইচ স’াপন করেছে। ঐ সুইচে জটিলতা দেখা দেয়ার কারণে পানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। তবে আইওএম, রেড ক্রিসেন্ট ও স্বাস’্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তারা গোপন রাখার চেষ্টা করে।
ইনডোরে চিকিৎসাধীন রোগীরা ওষুধ না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে উঠে আসে নানা অভিযোগ। হাসপাতালের স্টোরকিপার মোহাম্মদ আলী প্রথমে বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করলেও পরে জানান, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ওষুধ পরিবহন খাতে তার নিজস্ব ব্যয়কৃত ২৪ হাজার টাকার একটি বিল উপস’াপন করা হলে স্বাস’্য কর্মকর্তা বিলটিতে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে কাটছাট করে ৬ হাজার টাকার বিল পাস করেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, বেতনের টাকা খরচ করে তার পক্ষে ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব নয়, জুন থেকে তিনি সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রদত্ত ওষুধ সরবরাহ আনছেন না। এ ব্যাপারে স্বাস’্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল মাবুদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একাধিক বার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারী এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. এনামুল হক জানান, তারা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট প্রদত্ত ওষুধ সামগ্রী আউটডোর রোগীদের দিয়ে থাকেন। এরপরে হাসপাতালে কোনো রোগী আসলে তাদের প্রেসক্রিপশন দিয়ে বিদায় করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। তিনি আরো বলেন, সরকারি ঔষধ সরবরাহ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির কারণে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই কথা বললেন আইওএম এর নিয়োগকৃত ডা. রাজিব। তিনি বলেন, তারা যতক্ষণ দায়িত্বে থাকেন ততক্ষণ রোগীরা ওষুধ পাচ্ছে। এর বাইরে তাদের করার কিছু নাই। হাসপাতালের কর্মচারীদের অভিযোগ, এখানে বিভিন্ন এনজিও সংস’া কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে প্রদত্ত ওষুধ সরবরাহ ও শক্ত নজরদারি বা তদারকি না থাকার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। অসহায় রোগীদের দাবি, দ্রুত সময়ে এসব অনিয়ম ও অব্যবস’াপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস’া গ্রহণ করতে হবে।