সাংবাদিক মুনসুরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিতর্কিত সিইও নাজিম উদ্দিনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে নিপীড়ন, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও আইন অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. মুনসুর রহমান বাদী হয়ে আমলি ১নং আদালত, সাতক্ষীরায় মামলাটি দায়ের করেন। যার নং-সিআর-৬৭৪/২৪।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আসামি কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাটের মোংলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ নিপীড়ক, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, দুর্নীতিবাজ, আইন অমান্যকারী ও দুর্দান্ত প্রকৃতির ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী বায়েজিদ হাসান জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদর সাতক্ষীরার মৌখিক নির্দেশনায় পাকাপোল ব্রিজের উত্তরপাশে কম্পিউটার পরিচালনার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য একটি টং দোকান বসান। একপর্যায়ে আসামি নাজিম উদ্দিনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে বায়েজিদ হাসানের টং দোকানের ওপর। যার ফলে নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে সাতক্ষীরা পৌর কর্তৃপক্ষ গত ২৯ এপ্রিল বায়েজিদের টং দোকানটি তুলে পৌরসভায় নিয়ে যায়। যা গত ১ জুন দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘প্রতিবন্ধীর ভাসমান দোকান নিয়ে গেলো পৌরসভার কর্মীরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও গত ২ জুন সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকায় ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে বিকলঙ্গ করে পাঠিয়েছো/ জেলা প্রশাসকের জায়গায় অবস্থিত প্রতিবন্ধীর ভাসমান টং দোকান তুলে নিয়ে গেলো পৌরসভার কর্মচারীরা!/ পরাজিত মানুষগুলোর অনুপ্রেরণা প্রতিবন্ধী বায়জিদ নিরুপায়!’ শিরোনামে দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন: আলোচিত সেই আরডিসি নাজিমের শাস্তি মওকুফ
সংবাদ প্রকাশের পর নাজিম উদ্দিন বিভিন্ন লোক মারফত সাংবাদিক মুনসুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ক্ষতি করার হুমকিসহ সামনে পাইলে সাংবাদিকতা শিখিয়ে দেবে, এমনকি তার পা ভেঙে বাড়িতে পঙ্গু করে রাখবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে লোক মারফত তার অফিসে গিয়ে সাংবাদিক ও প্রতিবন্ধী বায়েজিদকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। তারপর তারা ২ জুন সকাল ১১ টায় তার (সিইও নাজিম উদ্দিন) অফিস কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই সিইও বাস্টার্ডের বাচ্চা বলে তুই-তুকারি শুরু করে দেন। তাকে জনগণের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে..গালি( প্রকাশ অযোগ্য), গালি( প্রকাশ অযোগ্য) তুই কোনে লেখাপড়া করেছিস, তুই কোন পত্রিকায় কাজ করিস, তোর বাবা কি করে, তোর চেয়ে বড় সাংবাদিক আমার চেনাজানা। এমনকি তোর বাবার ফোন নম্বর দে? তোর বাবা কেমন সু-পুত্র জম্ম দিয়েছে সহ নানা রকম অশ্লীল ভাষায় বৃষ্টিরমতো গালিগালাজ করে সাংবাদিক মুনসুর রহমানের সম্মানহানি করে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরার সাংবাদিক মুনসুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার সংবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর গত ৪ জুন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধন হয়। এছাড়া কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাটের মোংলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিতর্কিত সিইও নাজিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পৌরসভার বিতর্কিত সিইও নাজিম উদ্দিনকে শাস্তিমূলকভাবে ভোলা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। সেই বদলি ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নাজিম উদ্দিন বলে খবর চাউর রযেছে।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী সুর্ধান্য কুমার সরকার বলেন, আমলি প্রথম আদালতের বিচারক এসএম আশিকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়েছেন। শুনানি শেষে পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।