এক হীরক রাজার গল্প….
এজাহার মিয়া কোম্পানি’র জন্ম মায়ানমারে।জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন রোহিঙ্গা।দেশ স্বাধীনের আগে তিনি নাফ নদীর তীরে এসে বসতি গড়েন এবং শুরু করেন স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন আর্ন্তজাতিক স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। চোরাচালান ব্যবসার পাশাপাশি এজাহার মিয়া কোম্পানি টেকনাফ শহরে একটি হোটেল খুলে বসেন।সেই হোটেলটির নাম ছিলো ‘নিরিবিলি’।
১৯৭৮ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টেকনাফ সফরে আসলে এজাহার মিয়া কোম্পানীর হোটেলে আথিতীয়তা গ্রহন করেন পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের সাথে তিনি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
এই ঘনিষ্টতা্র সূত্র ধরে্ই এজাহার কোম্পানি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং তার হাত ধরেই টেকনাফে বিএনপির সাংগাঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এজাহার মিয়া কোম্পানী ছিলেন টেকনাফ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
টেকনাফ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও তৎকালীন শীর্ষ চোরাচালানকারী এজাহার মিয়া কোম্পানি’র সম্পর্কে এই তথ্য তুলে ধরার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে আর তা হলো এই এজাহার মিয়া কোম্পানি’র সুযোগ্য পুত্রই দেশের ব্যাপক আলোচিত সমালচিত ব্যাক্তি আবদুর রহমান বদি।
বর্তমানে তিনি উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ।তবে তার দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারী হিসেবে।
বাবার হাতধরেই পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতি দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনে হাতেখড়ি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বদি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপক চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে হেরে যান। একই বছরের ১২ জুনের নির্বাচনে বিএনপির থেকে মনোনয়ন পেলেও পরে তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর তিনি বিএনপির ছত্রছায়ার টেকনাফ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কয়েক বছর পর দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে তিনি গিরগিটির মতো রঙ পাল্টিয়ে যোগ দেন আওয়ামী রাজনীতিতে। বাগিয়ে নেন মনোনয়ন বনে যান আইন প্রণেতা। দেশের শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ অপরাধ, অরাজকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বিএনপি-জামায়াত প্রীতির কারণে তিনি এখন ব্যাপকভাবে বিতর্কিত।
ধারণা করা যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই রাজনীতি ও ইয়াবা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য আবদুর রহমান বদি আশ্রয় নিয়েছেন নানা রকমের অপকৌশলের।
১) এমপি বদি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন, যারা নির্বাচনের সময় বদির ভোট ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে।
২) অনেকটা প্রকাশ্যেই সদ্য সমাপ্ত ইউনি নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফের ১১ টি ইউনিয়ন এর ৭ টিতে বদি তার প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করেছেন এবং তার কাছের আস্থাভাজন লোকজন যারা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে সরাসরি যুক্ত তাদের নির্বাচিত করে এনেছেন।
৩) বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় এমপি বদি বিপুল অংকের কালো টাকা মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালেয়শিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে পাচার করেছেন।
৪) মায়ানমার সহ আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাথে বদির রয়েছে গোপন সর্ম্পক। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে এমপি বদি বিপুল পরিমান অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র তার নিজ এলাকায় প্রবেশ করিয়েছেন।
৫) লোকমুখে শোনা যায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলে বদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে নিজস্ব ভোট ব্যাংকের মাধ্যমে জয় লাভ করার চেষ্টা করবেন।