মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন অনেকে। সে তালিকায় রয়েছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত যুবলীগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনটি। সাঈদীর মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে ইতিমধ্যে বহিষ্কার হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ছাড়াও বহিষ্কার হতে যাচ্ছেন আরও অনেকে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ বলছে, সংগঠনের আদর্শবিরোধী কেউ কেউ সংগঠনে জায়গা করে নিয়েছিল। এর মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে স্বাধীনতাবিরোধীদের যারা সমর্থন করবে তাদের ঠাঁই হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর মধ্যে সিলেট ও লালমনিরহাটে ১২ জন করে, পাবনায় ১৭, সুনামগঞ্জে ১৫ এবং পিরোজপুরের নাজিরপুরে দুই ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া খুলনার রূপসায় দুই ও নাজিরপুরে এক যুবলীগ নেতা রয়েছেন। এর আগে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কারের খবর মেলে।
শনিবার রাতে খুলনার রূপসা উপজেলায় দুই যুবলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন রূপসার নৈহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তারেক আজিজ ও সিনিয়র সহসভাপতি আশিক ইকবাল।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের তিন উপজেলা ও একটি পৌরসভার ১২ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ শাখার সাইদুল মুরসালিন, মোশাররফ হোসেন সাগর, উপজেলা শাখার জুবায়ের আহমেদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার আব্দুল কাইয়ুম মুন্না ও রাশেদ আহমাদ তারেক, কানাইঘাট উপজেলা শাখার সারোয়ার আহমেদ, মাহফুজ আব্বাস, আবুল কালাম আজাদ, মামুন আহমদ, মুর্শেদ আলম ও রুহুল আমীন এবং গোলাপগঞ্জ পৌরসভা শাখার এহসান আহমদ।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন রুম্মান হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ ছাড়া উপজেলা যুবলীগের সহসম্পাদক জিয়া হাওলাদারকে বহিষ্কারের সুপারিশ এসেছে।
লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার সাইদুল ইসলাম সুমন, উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের মামুনুর রশিদ লিওন খান, হাতিবান্ধা উপজেলার হাসান ভূঁইয়া, মোদাব্বেরুল হক মিশেল, আল আমিন হোসেন সাগর, লালমনিরহাট সদর উপজেলার আমিনুল ইসলাম রানা, ইব্রাহিম ইসলাম ও রবিউল ইসলাম রবিন এবং লালমনিরহাট পৌরসভার শ্রাবণ হোসেন ও ঈসমাইল হোসেন আদর, পাটগ্রাম উপজেলার শহীদ এবং পৌরসভার ইবনে রুশদ।
পাবনায় ছাত্রলীগের আরও ১৭ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। এ নিয়ে ২৮ নেতাকর্মী বহিষ্কার হলেন। গতকালের বহিষ্কৃতরা হলেন ফরিদপুর উপজেলা সংগঠনিক সম্পাদক নাজিবুল ইসলাম নিয়ন, চাটমোহরের লিটন খান, রুবেল হোসেন, ভাঙ্গুরা উপজেলার রাকিবুল ইসলাম, ঈশ্বরদীর রুবেল হোসেন ও জয় মালিথা, চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের প্রান্ত হোসেন, ঈশ্বরদী পৌরসভার মেহেদী হাসান, ঈশ্বরদী উপজেলার মাহমুদুল হাসান শোয়েব, ফরিদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহ রহমান হাসিবুল ও তরিকুল ইসলাম জীবন, বেড়া উপজেলার হৃদয় রানা ও সবুজ সরদার, সুরুজ সরদার ও নাজমুল ইসলাম, সাঁথিয়া উপজেলার সুমন হোসাইন আকাশ ও গৌরীগ্রাম ইউনিয়ন শাখার হিমেল বিশ্বাস কাজল।
সুনামগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের ১৫ নেতাকর্মীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু তাহের নীরব, সজীবুল করিম সাদ্দাম, আকছার ইবনে আজিজ পাঠান, ছাত্রলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ রুবেল, ফকরুল হাসান জেনিস, মাহিন আহমেদ লোকমান, রবিউল আওয়াল, রিফাতুল হাসান হৃদয়, মোক্তাদির আহমেদ, ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের শিপলু আহমেদ, জামালগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কাশেম পারভেজ জয়, তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের মোজাম্মিল হক, লুৎফুর রহমান সোহাগ ও মোহাম্মদ মোস্তফা এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন শাখার আফসার হাসান মুন্না। এছাড়া আজও বহিষ্কার হচ্ছেন শতাধিক নেতযুবলীগ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানানোর ঘটনায় এখন পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও যারা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চলবে। তিনি বলেন, মূলত ধর্মের ব্যবহারের কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে অনেক নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
পাঠকের মতামত