কক্সবাজারে সাগরপথে আবারও বেড়েছে মানবপাচার। যার বেশি শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। অনিশ্চিত জীবন থেকে মুক্তির আশায় মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও সাগর পাড়ি দিচ্ছেন তারা। এতে ধীরে ধীরে বাড়ছে প্রাণহানি। সীমান্ত উত্তেজনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুরোনো পাচারকারীরা আবারও সক্রিয়, বলছেন স্থানীয়রা।
আনোয়ার সাদেক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচ-দশ ফুট ঘরের গাদাগাদি জীবন থেকে মুক্তির আশায় যেতে চান বিদেশে। এতে পড়েন পাচারকারীদের খপ্পরে। সাগরে মাঝপথে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় তার স্বপ্নের দেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা। ট্রলার ডুবে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছেন অনেককে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ভয়াবহ সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না এখনো।
সাগরপথে মালয়েশিয়া বা বিভিন্ন গন্তব্যে পাচারের ঘটনা আবারও বেড়েছে। সক্রিয় একাধিক পাচারকারী চক্র। এতে শুধু পুরুষরা নয়, কেউ বিয়েতে যৌতুক দেয়ার সামর্থ্য না থাকায়, কেউ ভবিষ্যত নিরাপত্তার চিন্তায় ঝুঁকি নিয়ে মেয়েকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন পাচারকারীদের কাছে।
পুলিশ বলছে, চিকিৎসাসহ নানা সেবা নেয়ার কথা বলে ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এর সুযোগ নেয় পাচারকারীরা। ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় কাটা তার কেটে ফেলেছে দুবৃত্তরা। এই সুযোগে অনেকেই বের হচ্ছেন ক্যাম্প থেকে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো.মাহফুজুল ইসলাম জানান, তাদের মতো করে তারা তারকাঁটার বেড়া কেটে রাস্তা পার হয়ে সাগরে যায়, সেক্ষেত্রে এটি নিয়ন্ত্রণ করা খুবেই মুশকিল।
এপিবিএন-৮ সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, দালালরা কয়েকস্তরে এ মানবপাচার করে। এতে রোহিঙ্গারা যেমন জড়িত, তেমনি বাংলাদেশি কিছু অসাধু চক্র জড়িত।
জেলা প্রশাসন বলছে, পাচারের কারণ চিহ্নিত করে তা নিরসনে নেয়া হচ্ছে পদক্ষেপ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, চিকিৎসা সেবা নিতে রোহিঙ্গাদের উখিয়া সদর হাসপাতালে আসতে হয়, তখন কেউ কেউ এ সুযোগে বাইরে কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করে।
গত চার অক্টোবর টেকনাফের বাহারছড়া উপকূলে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে মালেশিয়াগামী ট্রলার ডুবে ৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মরদেহ ভেসে আসে ছয় জনের। হদিস মেলেনি অনেকের।