আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে সাড়ে ৫২ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারের খসড়া তালিকা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এই তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আগে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব ছিলেন—এমন কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিসির প্রস্তুত করা প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা মাঠ পর্যায়ে যাচাইবাছাই শুরু হয়েছে। ইসির মাঠ পর্যায়ের একাধিক সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ইত্তেফাককে বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা প্রস্তুতের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তারা হয়তো নিজেরাই করতে পারে। তবে রবিবার ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরাই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে থাকবেন। সেই হিসেবে মৌখিক নির্দেশনায় জেলা প্রশাসকরা প্রিজাইডিং অফিসারদের তালিকা প্রস্তুত করছেন। একইভাবে জেলা প্রশাসকদের মৌখিক নির্দেশনায় ইউএনওরা প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা করেছেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ বিষয়ে অবগত নন।
প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা প্রস্তুত কাজে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যে সব প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিন্তু এখনো চাকরিরত আছেন তাদের পুনরায় প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। যারা চাকরিতে নেই তাদের জায়গায় নতুন করে রিপ্লেস করা হচ্ছে।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৬ আগস্ট সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খসড়ায় ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২ হাজারের মতো। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। রবিবার চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪টি।
সাধারণত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এক জন করে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সেই হিসাবে এবার প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪২ হাজার ১০৩ জন। এর বাইরে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ ধরে আরও ১০ হাজার ৫০০ জনের তালিকা করা হয়েছে। জেলা পর্যায় থেকে সর্বমোট সাড়ে ৫২ হাজার ৬২৮ জন প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা করা হয়েছে। এই প্রিজাইডিং অফিসারের বাইরে প্রতিকক্ষে এক জন করে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিকক্ষে দুই জন করে ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮২৮ জন পোলিং অফিসার দায়িত্বে থাকছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঐ সাড়ে ৫২ হাজার ৬২৮ জন প্রিজাইডিং অফিসারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এখন মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। কারোর বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কাজের সম্পৃক্ততা পেলে তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী আদর্শের কাউকে তালিকায় না রাখার নির্দেশনা আছে। জেলা প্রশাসকদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী প্রিজাইডিং অফিসারদের টেলিফোন আসছে। তাদের কাছেই বিস্তারিত জানতে চাওয়া হচ্ছে।
প্রিজাইডিং অফিসারের যোগ্যতা : ইসির নির্দেশ অনুযায়ী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাগণ। সরকারি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় কর্মরত প্রধান শিক্ষকগণ প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যদি কোনো ব্যক্তির প্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক থাকে তবে তাকে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয় না। প্রয়োজনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেক সময় প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। ধীরে ধীরে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। নভেম্বরের শুরুর দিকে তপসিল ঘোষণা করার কথা আছে। নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে। সৌজন্যে : ইত্তেফাক