আলমগীর মাহমুদ::
দ্রব্যমূল্যের উত্তাপেই শরীরে জ্বর। এই জ্বরের উত্তাপে বাংলার প্রতিটি আদম সন্তান ছটফট করছে শুধু। এ জ্বর সারার নয়।
কারণ একটি,যারা জাতিকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবে তারা মহাখুশীতে ভাবছে,” বুঝ মহাজোটের মজা! এবার যাবা কই?
জাতিকে সেবার জন্য যাদের হাতে পাঁচবছরের জন্য ডাক্তারিটা আমানত রেখেছি তাদের পক্ষে সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী ফারুক খানের বলে যাওয়া পুরোনো হর্ণটাই স্মরণে কড়া নাড়ছে শুধু “দ্রবের দাম তেমন বাড়েনি,এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। এই হর্ণ বাজার কথাও।
আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকেরা বাজারে যান না,তাঁদের বাজারে যেতে হয় না। বেতনের টাকায় যারা জীবন নির্বাহ করে এ সমস্যাতো তাঁদেরই।মাসিক মাসোহারায় যাদের চলতে হয় না তাঁরা এটা বুঝবেইবা কেমন করে?
সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার যখন ব্যর্থ হয় তার ষোল আনা দায় ক্ষমতাসীনদের উপর চাপানো উচিত নয়।পরিমানে কম হলেও তার অনেকখানি দায় বিরোধী দায় বিরোধী দলের উপর বর্তায়।বড় দুটো’ দলকে বিষয়টা বুঝাতে পারিনি বলেই আজ এ দৈন্য দশা।
দ্রব্যমূল্য ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা নিয়ে ছয়দিন আগে লিখতে বসেছিলাম। ছয়দিন আগে প্রাসঙ্গিক কারণে যে বাজার চিত্র উপস্থাপন করেছিলাম, ছয়দিন পর কোনটি মিলছে না। সকালের সাথে বিকেলের কোন দ্রব্যের দরের স্থিরতা নেই–”শুধু বাড়ছেই “। তাই বাজার চিত্র পরিহার করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের করণীয় কি?
কেনইবা এমন উপলব্ধি আমার মনে উদ্ভব? এ দুটি বিষয়কে উপাত্ত ধরে আমার দৃষ্টিভঙ্গিই উপস্থাপন করলাম শুধু।
ঘরে রাগত তলব। জানতে চায়, কি ব্যাপার তোমার হয়েছেটা কি? বাজার আনতে গেলে একটা আন,তিনটা আন না। প্রত্যেকদিনই তুমি কিছু না কিছু আনতে ভুলে যাও। বাজারের লিষ্টি দেয়া শুরু করলাম, ইদানীং তোমার কাছ থেকে বাজারের লিষ্টও হারিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছ। এখনতো বাসায় মেহমান কি আমি করি? আল্লাহ আমি এমন দূর্বিষহ মুস্কিলেই আছি… ‘তুমি আমারে রক্ষা করো’। এমন কথায় থতমত খেয়ে এখনও প্রচুর শক্তি, সাহস, সামর্থ্যের ভাণ দেখিয়ে কই ” এতো অস্থিরতার কি আছে,কি লাগবে লিষ্টি দাও।’
লিষ্টের নির্দশনায় বাহক মারফত আনা হল সব। প্রশ্ন দেখা দিল একটা মোমবাতির প্যাকেট নিয়ে।প্যাকেটে ৬টি মোম।আগে কেনা ৬টির সাথে এর কোন মিলই নেই,এগুলোর আকার ছোট ।মূল্যও রাখা হয়েছে কিছু বেশী।
ঝিলংঝা বি,ডি,আর ক্যাম্প,মৌলভী হামিদের দোকানের নামধাম এলাকাবাসীর মুখে মুখে। কারণ একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য তিনি সঠিকই রাখেন। ক্রেতা থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে দ্রব্যের মূল্য জিজ্ঞেস করা লজ্জাস্কর। তারপরও কৌতুহল নিবারণে ছিলাম অস্থির।
পরদিন ঐ দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে চলেছি,হামিদ ভাই কূশল বিনিময়ের সাথে সাথেই বিনয় করে জিজ্ঞাসা ‘গেলকাল রাধূনির তলবিয়ানা ”মোমবাতিরও কি দাম বেড়েছে? অপ্রস্তুত স্বরে,কয়টাকা রেখেছি?.. মুচকি হাসিতে ফিরতি জওয়াব,’আপনার কাছে একটাকা কমই রেখেছি। এখন সাইজও ছোট মূল্যও বেশী। আরো শুনে অবাক হবেন, যতদ্রব্যেরই দাম বেড়েছে সবকে আনুপাতিকহারে ছাড়িয়ে গেছে এই মোমবাতি।
মুখের হাসিতেই কথা শেষ করে ভাবনাতেই বাসার দিকে চলেছি,হঠাৎ এক অদ্ভুত চিন্তা আমারে আড়ষ্ট করল–‘যেদিন আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নেব,সেদিন সাদা কাফন কাপড়ের যে মূল্য হবে,চাকরির টাকায় সে মূল্য পরিশোধ করে আমার পরিবার আমারে সমাহিত করতে পারছে না।
কল্পনায় ভাসতে লাগল–”রাস্তার পার্শ্বে আমার মৃতদেহ পড়ে আছে, লাশের উপর একটি কাপড় বিছানো,পাশে একটি থালা,কিছু টোকাই আমার লাশের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে পথচারীকে উদ্দেশ্য করে বলছে–“আলমগীর প্রফেসারের লাশ, দাফনের জন্য আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য করুন।”
লেখকঃ
বিভাগীয় প্রধান।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।উখিয়া কলেজ,কক্সবাজার।
[email protected]