৭, ১৩, ২৯, ৩৬। সংখ্যাগুলোর আলাদা করে প্রতিটির গল্প রয়েছে। সেই গল্পের সঙ্গে মিশে আছে সাম্বার মোহনীয় সৌন্দর্য্য। সঙ্গে যোগ হতে পারত ৪৬, ৫৪, ৬২ ও ৯৩!
হয়নি তাতে আক্ষেপ বাড়লেও জয়-পরাজয়ে প্রভাব পড়েনি। শুরুর ওই চার সংখ্যাতেই কোরিয়া বধ করেছে ব্রাজিল। ৭ মিনিটে ভিনিসিয়াস, ১৩ মিনিটে নেইমার, ২৯ মিনিটে রিচার্লিসন ও ৩৬ মিনিটে লুকাস পাকুয়েটা গোল করে প্রথমার্ধেই প্রি কোয়ার্টারের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেন।
এরপর আর কোরিয়া ফিরে আসতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে এক গোল শোধ দিলেও স্কোরলাইন দাঁড়ায় ব্রাজিল ৪ – ১ কোরিয়া। ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত চারটি নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু তীরে গিয়ে তরী ডোবানোর মতো ঘটনা ঘটায় স্কোরলাইন বাড়েনি। তবে প্রথমার্ধের ওই চারটি ম্যাজিকাল নাম্বারে ঘটেছে অসাধারণ কিছু।
ব্রাজিলের কাছে শুধু গোলের দাবি থাকে না, দাবি থাকে সৌন্দর্য্যরেও। সাম্বার ছন্দে জোগো বোনিতোর সেই সুর বেজে উঠল বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের শুরুতে। অডাসিয়াস ড্রিবলিং, ওয়ান টু ওয়ান পাস, ফাস্ট মুভমেন্ট এন্ড প্লেসিং গোল! চারে মিলে একাকার স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ।
চোট কাটিয়ে নেইমার ফেরায় ব্রাজিল আজ ছিল অন্য চেহারায়। শুরুর আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেলে পরেও কাজ সহজ হয়। তাই শুরুতেই অলআউট অ্যাটাক খেলে গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। ৭ মিনিটে রাফিনিয়া দারুণ ড্রিবলিং করে বল নিয়ে ভেতরে ঢুকে ক্রস করেন। শান্ত মাথায় বল রিসিভ করে হাওয়ায় ভাসায় গোল করেন ভিনিসিয়াস।
১৩ মিনিটে নেইমার শো। রিচার্লিসনকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। নেইমার সফল স্পটকিকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। এরপর ২৯ মিনিটে দিনের সবচেয়ে সেরা গোলের দেখা মেলে। রিচার্লিসন প্রথম ম্যাচে অ্যাক্রোবেটিক গোলে নিজের কারিশমা দেখিয়েছিলেন। আজ দেখালেন দুরন্ত গতি, সঙ্গে বল নিয়ে কারুকার্য ও প্লেসিং ফুটবলের চাকচিক্যতা।
ডি বক্সের বাইরে ওয়ান টু ওয়ানে কোরিয়ার খেলোয়াড়ের সঙ্গে হেডে ড্রিবলিং করে বল জিতে মার্কুইনহসকে পাস দিয়ে ভেতরে ঢুকেন রিচার্লিসন। মার্কুনইহস বল দেন থিয়াগো সিলভাকে। ব্রাজিলের অধিনায়ক দারুণ এক পাসে ডি বক্সের ভেতরে রিচার্লিসনকে আবার বল এগিয়ে দেন। এক পায়ে বল রিসিভ করে আরেক পায়ে ফরোয়ার্ডের দারুণ গোল। সাম্বার ছন্দময় ফুটবল বলতে যা বুঝাই সেই ঐতিহ্য ফুটে উঠেছিল এই গোলে।
৭ মিনিটের ব্যবধানে ব্রাজিল পেয়ে যায় আরেক গোল। এবার কাউন্টার অ্যাটাকে বল নিয়ে ভিনিয়াস ক্ষীপ্রতা দেখান। ডি বক্সের কাছে গিয়ে ক্রস করলে সেখানে বল পান লুকাস পাকুয়েটা। ডানপায়ে জোড়ালে শটে রক্ষণ ভাঙেন এই মিডফিল্ডার।
৬৮ বছর পর ব্রাজিল পায় এমন শুরু। প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়ে। শেষ ব্রাজিল এমন শুরু পেয়েছিল ১৯৫৪ সালে। ফিফা বিশ্বকাপের ম্যাচে সেবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল তারা।
প্রতিটি গোলের পর ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের উদযাপন ছিল ভিন্ন মাত্রার। সাম্বার তালে নাচার পাশাপাশি নিজেদের সিগনেচার স্টেপ দিয়েছেন বারবার। হাত এবং পায়ে ছন্দ মিলিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচছিলেন নেইমাররা। ম্যাচে বার বার যে জিনিস দেখা গেল।তাদের এই উদযাপন, উল্লাস দেখে সত্যিই অনুভব হয়েছে, পুরোনো ব্রাজিল আবার ফিরে এসেছে। তাদের এই গোল উৎসব, এই নাচ-গান, এই কোমর দোলানো সবই চেয়ে দেখল বিশ্ব।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে রাফিনিয়া দুইবার পোষ্টের খুব কাছে গিয়ে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু কোরিয়ার গোল রক্ষক কিম সিং গুই তার দুটি শটই আটকে দেন। পরবর্তীতে রিচার্লিসন ও রদ্রিগোর সম্মিলিত আক্রমণ ফিরে আসে রক্ষণ থেকে এবং ম্যাচের অন্তিত মুুহূর্তে দানি আলভেজের নেওয়া শট ব্লক খায় ডিফেন্ডারের গায়ে। কোরিয়ার পাইক সিনওগোহ দূরপাল্লার শটে ম্যাচের ৭৬ মিনিটে গোল করে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন।
প্রি কোয়ার্টারে তেমন লড়াই করতে হয়নি ব্রাজিলকে। তবে শেষ আটে তাদের জন্য কঠিন যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। যেখানে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। যারা আগের ম্যাচে টাইব্রেকারে হারিয়েছে জাপানকে।