‘শাবনূর আমাদের বাসায় প্রায়ই আসত। আমি তা পছন্দ করতাম না। ইমন (সালমান শাহ) একবার শাবনূরকে নিয়ে কক্সবাজারে শুটিংয়ে যায়। সেখানে হোটেল উপলের একটি রুমে ইমনকে আটকে রেখেছিল শাবনূর। কৌশলে বেরিয়ে এসে ইমন আমাকে বিষয়টি জানায়।… শাবনূরের মা ও আমার শাশুড়ি ইমনের সঙ্গে শাবনূরের বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিল।’ জবানবন্দিতে এমনটাই দাবি করেছেন নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে ১৬১ ধারা ও আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন। সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্নিষ্ট অন্যদের দেওয়া সাক্ষ্যে সামিরার দেওয়া তথ্যের বেশিরভাগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানান তদন্তে যুক্ত কর্মকর্তারা। অবশ্য সে সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা শাবনূর জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘সালমানের বাসায় আমি মাঝেমধ্যে যেতাম। তার স্ত্রী সামিরা আমার ভালো বন্ধু ছিল। তারাও আমার বাসায় আসা-যাওয়া করত।’ তবে পিবিআই সালমানের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তার সঙ্গে অন্তরঙ্গতার বিষয়টি তুলে ধরায় এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি।
সহশিল্পী শাবনূরের সঙ্গে ‘অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা’ নিয়ে জটিলতাসহ পাঁচ কারণে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন বলে পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি জানান, সামিরা হক ও শাবনূরসহ ঘটনাসংশ্নিষ্ট ৪৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তাদের ১০ জন পরে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সামিরা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ জুলাই সালমান ভারতে যান।
খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে জানতে পারেন, শাবনূরকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন সালমান। ভারত থেকে দেশে ফিরে ওই বছরের ১ আগস্ট তারা সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে শাবনূর বিয়ের জন্য সালমানকে চাপ দেন এবং জানান যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা। দেশে ফিরে সালমান বিষয়টি তার স্ত্রীকে বলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা সামিরার কাছে হাস্যকর মনে হয়। কারণ চার বছরের সংসার-জীবনে তাদের কোনো সন্তান হয়নি। সালমানের মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালে মুশতাক ওয়াইজের সঙ্গে বিয়ে হয় সামিরার। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
সামিরা জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘শাবনূর প্রায়ই ফোন করত ও বাসায় আসত। আমার ও ইমনের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তাদের (সালমান-শাবনূর) মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আমি শ্বশুরকে নিয়ে এফডিসিতে যাই। সেখানে একটি রুমে ছবির ডাবিং চলছিল। ডাবিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে শাবনূর বারবার ইমনকে জড়িয়ে ধরছিল এবং বিভিন্ন অশালীন আচরণ করছিল।… ঘটনার আগের রাতে শাবনূরের সঙ্গে নতুন কোনো ছবি করবে না বলে ইমন চিত্রপরিচালক বাদল খন্দকারের সামনে একটি চুক্তিপত্র ছিঁড়ে ফেলে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাবনূর পরপর দু’বার ইমনের সিটিসেল মোবাইল ফোনে কল করে। ইমন ফোন নিয়ে বাথরুমে গিয়ে চিৎকার করে কথা বলছিল। তাকে যেন আর ফোন না দেওয়া হয় বলে কথা শেষ করেছিল। সিটিসেলের ওই ফোনটি শাবনূরই ইমনকে উপহার দিয়েছিল। রাত ১২টার দিকে শাবনূর আবারও কল করে। ইমন আবারও বাথরুমে গিয়ে কথা বলে। আমি রাগ করে নিচে চলে গিয়েছিলাম। নিচে দায়িত্বরত দারোয়ান ও খালেককে ইমন বলে দেয়, আমি যেন বাইরে যেতে না পারি। পরে আমি বাসায় চলে আসি ও কান্নাকাটি করি। তখন ইমন শাবনূরের উপহার দেওয়া একটি টেবিলফ্যান, মোবাইল ফোন ও চেয়ার রাগ করে ভেঙে ফেলে।’
ঘটনার দিনের বর্ণনায় সামিরা বলেন, ‘ইমন ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এরপর সে বাথরুমে যায়। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।… ডলির ডাকাডাকিতে আমি ঘুম থেকে উঠে আসি এবং দরজা খোলার জন্য নক করি। চাবি আনিয়ে দরজা খুলে দেখতে পাই, ইমন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। আমি ও মনোয়ারা ইমনকে পায়ের দিক থেকে তুলে ধরি। আবুল ড্রেসিংরুমে থাকা মই ধরে এবং ডলি মই বেয়ে উপরে উঠে বঁটি দিয়ে ইমনের গলার রশি কেটে দেয়। আমরা ইমনকে মেঝেতে নামিয়ে রাখি। আবুল ইমনের প্যান্টের পকেটে একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায়। এর মধ্যে রমনা থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা বাসায় আসে। চিরকুটটি আবুল আমার হাতে দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমি চিরকুটটি তাদের দিয়ে দেই। পাশের ক্লিনিক থেকে ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। ডাক্তার ইমনকে দেখে বলেছিলেন সে আর বেঁচে নেই।… ইমনকে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার শরিফ কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
সালমানের সঙ্গে পরিচয়পর্বের বর্ণনায় সামিরা জানান, ১৯৯০ সালে চট্টগ্রামের একটি ফ্যাশন শো-তে সালমানের খালার মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। এরপর সাত দিন সেখানেই থাকেন সালমান। তিনি প্রায়ই সামিরার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ল্যান্ডফোনে কল দিতেন। সামিরার ভাষ্যে বিষয়টি এমন- ‘সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। আমাকে না পেলে আত্মহত্যা করবে ইত্যাদি বলে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখত। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমার সঙ্গে কথা বলা নিয়ে ইমনের মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সে তার বাসায় ৯০টি ইনোকটিন ট্যাবলেট খেয়ে মরতে চেয়েছিল।… ১৯৯২ সালের নভেম্বর মাসে কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির শুটিংয়ের সময় মায়ের সঙ্গে ইমনের কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় সে স্যাভলন খেলে তাকে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে ওয়াশ করানো হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর ইমনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।’
এদিকে বাসার নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেকের সঙ্গে সামিরার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলেও একবার সন্দেহ করেন সালমান। তার বাবা এই সন্দেহের কথা ছেলেকে বললে দু’জনের মধ্যে ঝগড়াও হয়। সামিরা ও গৃহকর্মী জরিনা বেগম পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। জরিনা বলেছেন, ‘খালেকের সঙ্গে সামিরা আপার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করে (সালমান শাহ)। আমি বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করি। কিন্তু তারা আমাকে মারপিট করার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন কথা স্বীকার করায়, যা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। সামিরা আপা চট্টগ্রাম গেলে নায়িকা শাবনূর দুই দিন সালমান শাহর বাসায় আসে। এর মধ্যে এক দিন সারারাত ছিল। অন্য দিন ছিল রাত ১২টা পর্যন্ত।’
অবশ্য যে শাবনূরকে ঘিরে এত কথা, তিনি কিন্তু তার জবানবন্দিতে এসবের কোনো উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, ‘অভিনয় করার সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার সঙ্গে জুটি হিসেবে ১৪টি ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছি। অভিনয়ের সূত্রে তার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করতে গিয়েছি। সহশিল্পী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাকে আদর করে পিচ্চি বলে ডাকত। সালমান শাহ বেঁচে থাকলে আমাদের জুটি উত্তম-সুচিত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারত। তার সঙ্গে আমার ফোনেও কথা হতো।’ এর বাইরে অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে জানান তিনি।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি শমী কায়সারকে ...
পাঠকের মতামত