রহমত সালাম :
প্রতিটি বিষয় বা বস্তুর প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে ঐ বিষয় বা বস্তুর গুরুত্বের কারণে। বার মাসে এক বছর। রমজান ছাড়াও এখানে আরো এগারটি মাস রয়েছে। কেন অপর মাস থেকে রমজানের গুরুত্ব বেশি। এ বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিস কী বলেছে।
আমর যদি পবিত্র কুরআনে মাহে রমজানের গুরুত্ব খুঁজতে থাকি তা হলে দেখব সুরা বাকারাতে আল্লাহ তা’লা নিজেই রমজানের পরিচয় দিয়ে এর গুরুত্বের কথা বলেছেন। তিনি বলেন- “রমজান মাস (এমন একটি মাস) যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কুরআন (হচ্ছে) মানব জাতির জন্যে পথের দিশা, সৎপথের সুষ্পষ্ট নিদর্শন, (মানুষদের জন্যে হক বাতিলের) পার্থক্যকারী”।
এ আয়াতে কারীমা থেকে জানা যায় রমজান মাসের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই; শুধু এই কারণেই এ মাসের গুরুত্ব যে এ মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
সেই সাথে মানুষের মনে প্রশ্ন আসতে পারে কুরআন নাযিল হয়েছে তাতে কি? কুরআনের গুরুত্বই বা কী। এজন্য আল্লাহ নিজেই কুরআনের পরিচয় এ আয়াতের শেষাংশে দিয়েছেন। বলেছেন কুরআন হচ্ছে মানুষের জীবনের চলার গাইড লাইন বা পাথেয় যার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথে চলতে পারবে।
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ইহা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই।পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য।’ (সুরা বাকার)
এ আয়াত থেকে জানা যায় মানুষের জীবনে চলার জন্য যে নিয়ম-কানুন অনুসরন করা প্রয়োজন তা কুরআন মাজিদে রয়েছে। আর এ নিয়ম-কানুন সম্বলিত কিতাবই হচ্ছে পবিত্র কুরআন। মাহে রমজান মাসেই প্রথম কুরআন নাযিল শুরু হয়। এজন্যই রমজান মাসের এতো গুরুত্ব।
রমাজান মাসেই যে কুরআন নাযিল হয়েছে অপর আয়াতে আমরা দেখতে পাই। অর্থ্যাৎ কুরআন নাযিল প্রথম শুরু হয় রমাজান মাসে। আল্লাহ বলেন, আমি ইহা (কুরআন) নাযিল করেছি মহিমান্বিত রাতে।
আর এ মহিমান্বিত রাত হচ্ছে রমাজানের শেষ দশকের যে কোনো রজনী। এটি রাসুল ( স.) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
নবী করিম (স.) হতে বর্ণিত মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসের মধ্যে একটি হাদীস হচ্ছে যা আমরা নিম্নে আলোচনা করবো।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) শাবান মাসের শেষ শুক্রবার (খুতবায়) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেন:
হে মু’মিনগন তোমাদের মাঝে এমন একটি মাস এসেছে যার মধ্যে একটি রজনী রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর এ মাসটি হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই মাসে রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন এবং এই মাসের একটি রজনীতে ইবাদত করা ও নামাজ কায়েম করাকে অন্যান্য মাসের সত্তর রাতের ইবাদতের সমান নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে (আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য) একটি ভাল ও মুস্তাহাব কাজ আঞ্জাম দেবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে ওয়াজিব ও ফরজ কাজের সওয়াব প্রতিদান স্বরূপ দেবেন।
এ হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহ শুধু রমজান মাসে মানবজাতির চলার পাথেয় কুরআন নাযিল করেই শেষ করেননি। বরং এ মাসকে প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে বাকী এগারটি মাস মানুষ সঠিক পথে চলতে পারেন।
আল্লাহ এ মাসের ইবাদতে বিশেষ পুস্কার দেয়া কথা ঘোষণা করেছেন, হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি এ কথা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।
অপর একটি হাদিসে বলা হয়েছে-
হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে শুধু রোযাদাররা প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে রোযাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। যখন তারা প্রবেশ করবে তখন ঐ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না।
আসুন আমরা এ প্রশিক্ষনের মাসে আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ কামানা করি। তার কাছেই আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়ার জন্য আবেদন করি।
আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমার বান্দাগণ তোমার কাছে আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করবে, অবশ্যই আমি তখন অতি নিকটে, আমি প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনা গ্রহণ করি। কাজেই তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আসুক হয়তো তারা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬।
আসুন, সকলে মিলে রহমতের মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ’র দয়ার সাগরে অবগাহন করে ধন্য হই । আমীন !!!
# প্রভাষক,
রাজাপালং ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসা, উখিয়া,
# খতীব,
আলিফ-লাম-মীম জামে মসজিদ,
লাবণী বীচ পয়েন্ট, ককস বাজার ।
পাঠকের মতামত