শফিক আজাদ, ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে::
সীমান্তের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অস্থায়ী শিবির স্থাপন করে আশ্রয় নিয়েছে ২০হাজার রোহিঙ্গা। রবিবার সকাল থেকে দুপুর মিয়ানমারের অভ্যান্তরে থেমে থেমে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচন্ড গুলিবর্ষণে শব্দ শোনা গেছে। দুপুর ১টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে টেকিবনিয়ায় সে দেশের নিরাপত্তার বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। প্রচন্ড গুলিবর্ষনের ফলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিমরা গ্রাম ছেড়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে দিকে। সীমান্তের বসবাসকারী স্থানীয় জানিয়েছেন গত শুক্রবার থেকে মিয়ানমারে অভ্যান্তরে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনার এখানকার বসবাসকারী লোকজনের মাঝে অজানা এক আতংক বিরাজ করছে। সীমান্তের কাছাকাছি ঘরবাড়ী থেকে পরিবারে সদস্যদের অন্যত্রে সরিয়ে দিচ্ছে। বিজিবি’র পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে সতর্কতা জারী করেছে।
সরজমিন রোববার সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলি কলাবাগান, তুমব্রু পুর্বকূল উত্তর পাড়া, আমতলি, রেজু গর্জনবনিয়া উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী, ধামনখালী, রহমতের বিল, পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া, বটতলি এলাকা ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩দিনে সহিংসতায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা আল-ইয়াকিন গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় ৮৯জন লোক নিহত হয়। এদের মধ্যে ১১জন সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বলে দাবী করেছে মিয়ানমার সরকার। বাকী ৭৮জন রোহিঙ্গা। এরপর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মিয়ানমারের টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, রাখাইন রাজ্যে সেনা ও রাখাইনদের নির্যাতনের কারনে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য অন্তত ২০হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অস্থায়ী শিবির স্থাপন করে অবস্থান করছে।
ঘুমধমু জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যান্তরে চলে আসা টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন(৩৩) বলেন, শনিবার দুপুরে অতর্কিত অবস্থায় তাঁদের বাড়ী-ঘর লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তাঁরা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসে। সাথে তাঁর স্ত্রী ছৈয়দা খাতুন (২৯) ছেলে হাসান (৭) মোঃ ইছা (৫) মেয়ে মাহিদা (২)কে নিয়ে এদেশে অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে।
ঘুমধমু জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যান্তরে চলে আসা টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিম (৫০) ও তাঁর ভাই মোঃ নোমান (৪৫) বলেন, তারা স্ত্রী, পুত্র,জায়গা-জমি,গরু,ছাগল, হাঁস, মুরগী ফেলে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে বিজিবি’র হাতে আটক অবস্থায় রয়েছে এরা। স্থানীয় গ্রামবাসির সহযোগিতায় রাতে এবং সকালে খিচুড়ি ও গুড়,ছিড়া,মুড়ি সরবরাহ করা হয় রোহিঙ্গাদের মাঝে।
তুমব্রু বিজিবি’র সুবেদার মোঃ হাকিম বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সীমান্ত কড়া নজরদারী রয়েছে যেন একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। তবে চোরাইপথে কিছু রোহিঙ্গা বিজিবি’র চোঁখ ফাঁকি দিয়ে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে।
সীমান্তে এসব পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বোরবার এসব সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।