পাহাড়ি জনপদ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় অবৈধ গড়ে উঠা ইটভাটা পুনরায় চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে প্রাথমিক ইট তৈরির অনুমোদন পেতে কোটি টাকার মিশনে নেমেছে এক সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা এখন বিশেষ একটি দলের নেতা পরিচয় দেওয়া স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।
আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ঘুমধুমের গহীন সবুজ অরণ্যে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা হয় এসব ইট ভাটা। বনভূমির পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় ইট। জ্বালানী হিসেবে যোগান দেয়া হয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছগাছালি। ইট ভাটার আশপাশে নির্বিচারে বন জঙ্গল সাবাড়, পাহাড় কর্তনসহ নানাবিদ তাণ্ডবে বনভূমি লণ্ডভণ্ড করে ফেলেন কোটি টাকা মিশনে নামা অবৈধ ইটভাটা গুলোর মধ্যে এ-এস-বি, বি-এইচ-বি, এ-এফ-ডি, এইচ-এস-বি, ডি-এস-বি, এইচ-কে-বি, বি-বি-এম, কে-আর-এস, কে-আর-ই, এইচ-এ-জেট-আই সহ আরও একাধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ইটভাটা জনিত বায়ুদূষণ রোধে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়া হবে না। পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ৩ হাজার ৪৯১টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। অবৈধভাবে পার্বত্য এলাকায় নির্মিত সব ইটভাটা স্থানান্তর করা হবে।
এরআগে গত ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে
হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর ১২০৪/২০২২ এর আদেশে এই অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধ করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা প্রশাসন। পর আবারও চালু করেন ইটভাটার কার্যক্রম। ভাটা মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড় কেটে মাটি এবং জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ ব্যবহার করে ভাটা চালিয়ে ছিলো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘুমধুম এলাকার রাজনৈতিক নেতা জানান, অবৈধ ইটভাটা পুনরায় চালু করার জন্য বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কোটি টাকা মিশনে নেমেছেন একটি সিন্ডিকেট। তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও এই অবৈধ ইটভাটা মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে চালিয়েছেন৷ তাঁরা এবারও বনের কাঠ এবং পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করে এসব কাজ চালিয়ে যেতে মরিয়া৷
গত ১৩ নভেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী ইউএনও মো: মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, অবৈধ কোন অবৈধ ইটভাটা নাইক্ষ্যংছড়িতে হবে না। যেহেতু পাহাড়ে ইটভাটা করার কোন অনুমোদন নেই, সেহেতু নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় কেটে, কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা তৈরী সম্ভব না। এ বিষয়ে তার দপ্তর জিরো টলারেন্সে থাকবে। এছাড়া দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোন অন্যায় সহ্য করা হবে না। তিনি সরকারী কর্মকর্তা-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলসহ সর্বসকলকে নিজেদেরকে দায়িত্বশীলতার সাথে দায়িত্বপালনের আহবান জানান।
সীমান্তবর্তী উপজেলার পরিবেশবাদী জসিম আজাদ জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি শহর থেকে দূরে হওয়ায় ঘুমধুম ইউনিয়নে যেভাবে অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে তা অকল্পনীয়। এসব অবৈধ ইটভাটা আওয়ামী লীগ সরকার আলমে আমলাদের মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে চালিয়েছেন৷ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁরা আবার বিশেষ দলের প্রভাশালী নেতার প্রভাব কাটিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে কোটি টাকা নিয়ে অবৈধ ইটভাটার অনুমতির জন্য ঘুরপাক খাচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও জানিয়েছেন, শুধু ভবন নির্মাণই যথেষ্ট নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। তাই, লাইসেন্স এবং ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ইটভাটা পরিচালনা করা যাবে না।
বিবিএমওএ-এর নেতৃবৃন্দ ইটভাটা শিল্পের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণের প্রস্তাব দেন। ইটভাটায় সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এবং উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
পাঠকের মতামত