বিশেষ প্রতিবেদক:
টেকনাফ সীমান্তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালিকাভুক্ত ৭০০ ইয়াবা ব্যবসায়ী। মহেশখালীর ৭জন ও বান্দরবানের ১৫জন ছাড়া বাকী ইয়াবা ব্যবসায়ী সকলেই টেকনাফের বাসিন্দা। এই তথ্য সীমান্ত সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার। এসব ব্যবসায়ী ইয়াবা পাচারে টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ২০টি পয়েন্ট ব্যবহার করছে। আর টেকনাফ সীমান্তের জল ও স্থল পথ দিয়ে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। টেকনাফের কিছু ব্যক্তির ক্ষমতার দাপট ও প্রভাবে ইয়াবা পাচার হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। খোদ আইনশৃংখলা বাহিনীও প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে অসহায় বলে জানা গেছে।
সরেজমিন জানা গেছে ইয়াবা পাচারের লোমহর্ষক তথ্য। বর্তমানে টেকনাফের অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে প্রভাবশালীরা ইয়াবা পাচার করে। তাদের বিরুদ্ধে সহজে কেউ মুখ খুলে না। স্থল, সাগর ও নদীপথে ইয়াবা পাচারে যেসব পয়েন্ট ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে, নদীপথে শাহপরীরদ্বীপ, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, জালিয়াপাড়া, হেচ্ছারখাল, নাইট্যংপাড়া, বড়ইতলী, জাদিমোরাসহ হ্নীলার বিভিন্ন পয়েন্ট। সাগরপথের হাড়িয়াখালীভাঙ্গা, কাটাবুনিয়া, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মুন্ডারডেইল, বাহারছড়া ঘাট ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সাগর ও নদীপথে আসা ইয়াবার ক্ষুদ্রতম অংশ পাচার হয় টেকনাফ, হ্নীলা ও উখিয়ার বিভিন্ন স্থল পয়েন্ট দিয়ে। বাকী ইয়াবার বড় বড় চালান যাচ্ছে সাগর ও নদীপথে। বর্তমানে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে দক্ষিনে সীতাপাহাড় নামক জায়গায় মিয়ানমারের ট্রলার এসে দিয়ে যায় ইয়াবার বড় বড় চালান। পরবর্তীতে সেখান থেকে বাংলাদেশী ট্রলারগুলো ইয়াবা নিয়ে আসে এপাড়ে। একাজে এপার-ওপারের বড় বড় রাঘববোয়ালরা জড়িত। সাগর পথে বড় বড় মাছ ধরার ট্রলারে করে ইয়াবার বিশাল বিশাল চালান যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও নারায়নগঞ্জে।
টেকনাফের ইয়াবার বড় বড় রাঘববোয়ালরা এখন নিজ এলাকা ত্যাগ করে বেশির ভাগ চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, সাইফুল করিম প্রকাশ হাজী সাইফুল, শুক্কুর, শফিক, ফয়সাল, নিপু, বড় হাবিব পাড়ার জাফর আলম, নাজির পাড়ার সিদ্দিক আহমদ, ফজল হাজির ছেলে জিয়া, একরামসহ আরো অনেকে। তারা চট্টগ্রামে অবস্থান করে মিয়ানমার থেকে আনছে ইয়াবার বড় বড় চালান। তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে টেকনাফের খুরেরমুখ পয়েন্টের ফয়সাল ও তার চাচা, আক্তার কামাল, শাহেদ কামাল।
উল্লেখিতরা ছাড়াও টেকনাফে বর্তমানে ইয়াবা পাচারে জড়িত আরো অনেকের নাম আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তারা হলো, হ্নীলার মেম্বার নুরুল হুদা, তার বিয়াই মেম্বার জামাল, ছৈয়দ আলম সিকদার, নুরুল আলম, মোহাম্মদ আলম, মুফিজ আলম, নুরুল মোস্তফা নাছিম, ছৈয়দ আহমদ সেতুসহ মহেশখালিয়াপাড়ার ক্ষমতাসীন দলের অনেকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার লোকজন ইয়াবা ব্যবসায় বর্তমানে কতিপয় জনপ্রতিনিধিও জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান নুর হোছনের নামও উঠে এসেছে। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট মৌলভী পাড়া ও নাজিরপাড়ার পরিবর্তে বর্তমানে হাড়িয়াখালী মাছের প্রজেক্টের আড়ালে ইয়াবার চালান দিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ জানান, টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষমতাশালী। তাদের হাতেনাতে ইয়াবাসহ আটক করা খুবই কঠিন। কারণ রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ইয়াবা পাচারের কৌশল নিয়েছে। তারপরেও ইয়াবার বিরুদ্ধে টেকনাফ বিজিবির অবস্থান কঠোর। এ কারণে বছরের পর বছর ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মজিদ জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন আপোষ নেই। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি ইয়াবাসহ পাচারকারীদের পাকড়াও করতে।