বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোববার অজ্ঞাতনামা জঙ্গি গোষ্ঠী মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ক্যাম্পে হামলা চালায়। সে ঘটনায় ৯ জন সদস্য নিহত হয়। ঘটনায় জড়িত জঙ্গি গোষ্ঠী দমনে এ অভিযান চালাচ্ছে সেনা বাহিনী ও বিজিপির যৌথ বাহিনী।
এদিকে বুধবার বিকেলে বিবিসি বাংলা তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বার্মার রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার চারজন সেনা সদস্য ও একজন সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হয়েছে। এছাড়া ঐ এলাকায় আরো সাতটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তবে সেই মৃতদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের সংঘাতে ১২ জন নিহত হয়েছে।
ইয়াঙ্গুন থেকে বিবিসি'র সংবাদদাতার বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তে রাখাইন প্রদেশে গত কয়েকদিন ধরে সংঘাত চলছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সমন্বিত হামলাগুলোর জন্য সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করছে বার্মার সরকার।
তবে বিবিসি'র সংবাদদাতা বলছেন, এসব হামলার জন্য কারা দায়ী সেটি তাদের কাছে পরিষ্কার নয়। কারণ সাংবাদিকদের ঐসব এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে রাখাইন রাজ্যে এ সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সবগুলো পক্ষকে সংযম দেখানোর আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
টেকনাফ ২ বিজিবি’র ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মিয়ানমারে হামলা ও হামলা পরবর্তী সেনা অভিযানে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে বিজিবি সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা অভিযানে বাংলাদেশের কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী আসতে পারবে না, এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে দেশের প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী আসার প্রয়োজন পড়লে বা অভিযান চালালে পাশের দেশের সাথে আলোচনা করতে হয়। আমাদের সাথে মিয়ানমার সীমান্তবাহিনীর আলোচনা হয়েছে।
তাদের দেশে অনেকগুলো ক্যাম্পের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। কর্মকর্তাসহ সদস্য নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের এমন সিদ্ধান্তকে আমরা না করতে পারি না। আমরাও আমাদের প্রয়োজনে অনেক সময় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের এ অঞ্চলে এমনটি করে থাকি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি’র ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা সর্বদা সতর্ক। সীমান্ত দিয়ে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজরদারির বিষয়ে সীমান্তে সব বিওপি চৌকিতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বিভিন্ন চৌকিতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে আটক করার ঘটনা ঘটে থাকে। অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে দ্রুত ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু এই তিনদিনে মাত্র দু’জন রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। তাদেরও আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল মজিদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সীমান্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের মতোই আছে। এখানে কোনো প্রভাব পড়েনি। যদি কেউ অবৈধ অনু্প্রবেশ করে থাকে তাকে নিয়মানুযায়ী থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়। এই কয়েক দিনে কোনো রহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা নেই।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের বলেন, আমার থানা এলাকার সীমান্তে কোনো উত্তেজনা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা নেই। পরিবেশ শান্ত ও ভালো। এ বিষয়ে সীমান্তবর্তী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ মিয়ানমানের ৩৩ নং সীমানা পিলার এলাকায় আমার বসবাস। আমাদের সীমান্ত এলাকার পরিবেশ ভাল। কোনো ধরনের উত্তেজনা নেই। তবে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিজিবির টহল আগের চেয়ে চোখে পড়ার মত বেড়েছে।
সীমান্তবর্তী এলাকার আরেক বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ মাঝে মধ্যে সাধারণ লোকজন গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান। তবে সীমান্তে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিজিবির অতিরিক্ত টহল দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহা পরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।পরিবর্তন