পবিত্র কোরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা হচ্ছে সূরা ফাতিহা। এই সূরার অন্যতম নাম হচ্ছে সুরাতুস সালাত। এখানে সালত মানে নামাজ হতে পারে, দুরুদও হতে পারে। সূরা হিসেবে এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এই একটি সূরা নাজিল হয়েছে দু’বার-একবার মদিনায় এবং একবার মক্কায়। হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন রাসূল (সাঃ) এর সমানে যখন প্রথম জিবরিল (আঃ) হাজির হয়ে কললেন- ‘ইক্বরা (পড়) তখন রাসূল বললেন, ‘কি পড়বো?’।
একথা শুণে জিবরিল মুহূর্তের জন্য অন্তর্ধান করলেন এবং ফিরে এলেন সূরা ফাতিহা নিয়ে। বললেন- আল্লাহর প্রশংসা এভাবে করুন। দ্বিতীয়বার একই সূরা সম্পূর্ণ অবস্থায় নাজিল হয় মাদিনায় হিজরতের তৃতীয় দিন হযরত আবু আনসারির (রাঃ) ঘরে। এ সূরার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এই একমাত্র সূরা যা বিসমিল্লাহসহ নাজিল হয়েছে। অন্যান্য সূরার সঙ্গে বিসমিল্লাহ নাজিল হয়নি।
এই সূরায় আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করছেন। এখানে তাই তার পরিচয় হলো তিনি মাহমুদ।তিনি যখন অন্যকে তার প্রশংসা করতে বলেন তখন তিনি হন আহমদ। আল্লাহ যখন অরূপ থেকে রূপে প্রকাশিত হন তাখন তার নাম হয় মুহাম্মদ।মাহমুদ এবং আহমদের মধ্যে যোগসূত্র হচ্ছেন মুহাম্মদ।
এ সূরার আয়াতের সংখ্যা হচ্চে সাত। সাত একটি রহস্যময় সংখ্যা। সাতের কোন উৎপাদক নাই। সাতকে এক ছাড়া কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। অন্যদিকে সপ্ত আসমানের কথাও কোরআনো বলা হয়েছে। এ সাতটি আয়াতে ১৪ জন ফেরেশতা আছেন। এ ১৪ জন ফেরেশতা এ সূরার তেলাওয়াতকারীকে সাতটি আসমানি এবং সাতটি জমিনি আপদ থেকে রক্ষা করেন।
তাদের কাজ হচ্ছে এ সূরার তেলাওয়াতকারীকে ১৪০ রকমের রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করা। এর প্রথম আয়াতের নাম হচ্ছে আয়াতুল হামদ।দ্বিতীয় আয়াতের নাম আয়াতে তাদাব্বুর। তৃতীয় আয়াতকে বলা হয় আয়াতে একরার এবং অবশিষ্ট অংশ হচ্ছে আয়াতে দোয়া।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত বোখারি শরীফের একটি হাদিস আছে, তাতে বলা হচ্ছে যে, সূরা ফাতেহা বা সূরাতুল হামদের মর্তবা হচ্ছে সেখানে, যেখানে স্বয়ং আল্লাহর মর্তবা। এর মত কোনো সূরা কোনো ধর্মগ্রন্থেই নাজিল হয়নি। এক কথায় এ হচ্ছে সমগ্র কোরআনের নির্যাস। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের মূল কথা।
কেউ কেউ বলেন, মুক্তাদিরা সূরা ফাতেহা মনে মনে পড়বে। কিন্তু রাসূলে পাক বলেছেন, এক্ষেত্রে ইমাম সূরা ফাতেহা পড়লেই যথেষ্ট। হুজুর পাকের এ কথার সমর্থনে নাজিল হলো- ওয়া ইজা কোরিয়াল কোরআনু ফাসতামিউ রাহু ওয়া আনসিতু লাআল্লাকুম তুরহামুন (সূরা আ’রাফ/২০৪)। অর্থাৎ যখন কেউ কোরআন পড়বে তোমরা তা মনোযোগ সহকারে শুনবে, যাতে করে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হতে পার।সুতরাং এ থেকেই বলা যায়, মুক্তাদিরা সূরা ফাতেহা শুনলেই হবে।
নামাজের দুটো অংশ রয়েছে। একটি অংশ আল্লাহর জন্য, আন্যটি বান্দার জন্য। আল্লাহ বলেন, নামাজের অর্ধেক আমার, অর্ধেক আমার বান্দার। বান্দা যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলে আল-হামদুল্লিাহ-তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের ডেকে বলেন-ওহে ফেরেশতাগণ, দেখো আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে।
আল্লাহ নিজে যখন তার কোনো বান্দা সম্পর্কে এমন কথা বলেন তখন তার জন্য কোন দোজখের আগুন থাকেত পারে না। যখন বন্দা বলে আর-রাহমানির রাহিম-তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘দেখ, দেখ, আমার বান্দা আমার গুণে গুণান্বিত হয়ে আমার প্রশংসা করছে।’ এমন নামাজকেই মেরাজুল মুমেনিন বলা হয়েছে।
(লেখাটি হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি (রহ) এর ‘সংলাপ সমগ্র’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত