জসিম উদ্দিন টিপু :
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে বিশ^জুড়ে। দ্বীপটি আবার ইউনিয়নও। এই ইউনিয়নে আছে কেবলমাত্র ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার নাম জিনজিরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেটি ১৯৪৮সনে প্রতিষ্টা লাভ করে। দেশে একটি ইউনিয়নে ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এরকম নজির আর কোথাও নেই। ইতিহাস গড়া দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিনের প্রাথমিক শিক্ষা দেখভাল করার কেউ নাই বললেই চলে। নামে মাত্র স্কুল কমিটি থাকলেও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে তাদের ভুমিকা নেই বছরের পর বছর ধরে। সরেজমিনে পরির্দশন করে জানাগেছে, স্কুলটিতে ৭জন শিক্ষকের বিপরীতে কাগজে কলমে ২জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও কেবলমাত্র একজন প্যারা শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চলে আসছে। এখানকার কর্মরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: রফিক নিজেই প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক। তিনিই নাকি এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অন্তত দেড় বছর ধরে। স্থানীয়দের অভিযোগ ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা প্রাক প্রাথমিকের এই শিক্ষক দু‘য়েক দিন ছাড়া মাসের পুরো কর্মদিবসেই কারণে অকারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। অপর সহকারী শিক্ষক নুরুল আলম মানসিক রোগী হওয়ায় নিয়োগের পর থেকে স্কুলে ক্লাশ নিতে অক্ষম বলে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী সুত্রে জানাগেছে। অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, শিক্ষক সমস্যার কারণে জিনজিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে জিনজিরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ত একদিন ছাত্র শুন্য হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের একমাত্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ সমুহে শিক্ষক পদায়ন না হওয়ায় অভিভাবকরা শিক্ষা অফিস সহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন। সচেতন মহল প্রবালদ্বীপের প্রাথমিক শিক্ষায় নিজেদের আশংকার কথা জানিয়ে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালনা কমিটি বাদ দিয়ে দ্বীপের পড়া-লেখার উন্নয়নে শিক্ষা বান্ধব লোকজন দিয়ে কমিটি গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রায় ৮হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিনের মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা নিশ্চিত করতে “জিনজিরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়“র সমস্যার সমাধান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মো: রাশেদুল ইসলাম, বায়েজীদ বোস্তামী ও সাদিয়া আক্তার দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতেও ভয় হচ্ছে। ৫৬জন ছাত্র/ছাত্রী আগামী পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। আমরা দ্রুততার সময়ে স্কুলে শিক্ষক পদায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বদলী করে তাঁর স্থলে আরেকজন দক্ষ এবং কর্মঠ শিক্ষক পদায়ন করতে অভিভাবক, ছাত্র/ছাত্রী ও এলাকাবাসীর দাবীতে পরিণত হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুর আহমদ সেন্টমার্টিনে প্রাথমিক শিক্ষার করুণ অবস্থা জানিয়ে বলেন, ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক রফিক নামে বেনামে মাসের পর মাস স্কুল ফাঁকি দেন। তিনি মাসের বেশীর ভাগ সময় দ্বীপের বাইরে অবস্থান করেন। অপর শিক্ষক নুরুল আলম মানসিক রোগী হওয়ায় নিয়োগের পর থেকেই ক্লাশ নিতে একেবারেই অক্ষম হওয়ায় একজন প্যারা শিক্ষক দিয়েতো আর স্কুল চলে না। ৩শতাধিক ছাত্র/ছাত্রীর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে মর্মে আমি ইউএনও এবং শিক্ষা অফিসারকে ইতিমধ্যে অনুরোধ জানিয়েছি। এদিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক মো: রফিকের মুঠোফোনে একাধিকবার রিং করেও মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার ধর দৈনিক কক্সবাজার বলেন, হাইকোর্টের একটি রিটের কারণে শিক্ষক নিয়োগ আপাতত বন্ধ আছে। টেকনাফে শতাধিক শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। একারণেই মূলত স্কুল সমুহে শিক্ষক স্বল্পতা থেকেই আছে। বিষয়টি ৬অক্টোবরে অনুষ্টিত শিক্ষা অফিসারদের সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। শুন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তখন সেন্টমার্টিনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার মত বা সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টজনেরা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ...
পাঠকের মতামত