সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ কিংবা নিষিদ্ধ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। এর পরও মিথ্যা অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের চিহ্নিত কয়েকজন অবৈধ হোটেল মালিক। তারা কৌশলে দ্বীপের সাধারণ বাসিন্দাদের উস্কে দিচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ধরে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ, সর্বশেষ গতকাল বুধবার কক্সবাজারে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়ন জোটের ব্যানারে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। মানববন্ধন শেষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
তাদের দাবি, সেন্টমার্টিনে ইতোমধ্যে নির্মিত স্থাপনাগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া, পরিবেশ-সংক্রান্ত সব মামলা প্রত্যাহার করা। দ্বীপে রাস্তা সম্প্রসারণ এবং নির্মাণ করসহ ১৮টি দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জোটের চেয়ারম্যান পরিচয় দেওয়া শিবলুল আজম কোরেশির সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবকাশ নামে তিন তলা বিশিষ্ট একটি হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া উপস্থিত হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুরেরও রয়েছে একটি আবাসিক হোটেল। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেওয়া মৌলভি আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন রয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট আবাসিক হোটেল। এসব আবাসিক হোটেল প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ সমকালকে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ কিংবা নিষিদ্ধ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। মূলত দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত চিহ্নিত কয়েকজন অবৈধ হোটেল মালিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন উস্কে দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, দ্বীপটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ার পরও চিহ্নিত হোটেল মালিকরা রাস্তা নির্মাণ ও অবৈধ স্থাপনাগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে তাদের আসল উদ্দেশ্য কী।
পরিবেশ আন্দোলনের এ নেতা জানান, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আইন অমান্য করে এখানে শুধু আবাসিক হোটেলই নির্মিত হয়েছে ২০০’র ওপরে। তাই দ্রুত সময়ে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা মুফিজুর রহমান বলেন, একটি জোটের ব্যানারে যে ১৮ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্মিত স্থাপনাগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া, পরিবেশ-সংক্রান্ত সব মামলা প্রত্যাহার করার মতো দাবির সঙ্গে আমরা একমত নই। তবে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্বীপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানাই।
প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় নির্মিত স্থাপনাগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়াসহ ১৮ দাবি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়ন জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশি বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় কোনো স্থাপনাকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না– এমন কোনো বিষয় আইনে নেই।সূত্র সমাকাল
পাঠকের মতামত