প্রকাশিত: ২৬/০২/২০২০ ৯:১৭ এএম

আবদুর রহমান, টেকনাফ::
বিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ ও ডলফিনের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। গত একসপ্তাহে ৮টির বেশি মৃত কচ্ছপ ও ডলফিন পাওয়া গেছে দ্বীপটিতে। অথচ গত এক বছরে এই মৃতের সংখ্যা ছিল ১০। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমনটি ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, দ্বীপে পরিবেশ রক্ষায় বর্তমানে মাত্র ৬ জন বিচ কর্মী এবং পরিবেশ অধিদফতরের ১৭ জন কর্মী আছেন।

পরিবেশ অধিদফতর ও বিচের কর্মীরা জানান, সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে সেন্টমার্টিনের সৈকতের দক্ষিণ পাড়ায় একটি মৃত কচ্ছপ ও পশ্চিম পাড়ায় একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এর আগে ২৩ ও ২২ ফেব্রুয়ারি জেটির দক্ষিণ পাশে পশ্চিম ও উত্তর সৈকতে (কবরস্থানের পাশে) কচ্ছপ ও ডলফিনের আরও দুটি মৃতদেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়।

সাধারণত দ্বীপের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব ও পূর্ব-দক্ষিণ দিকের প্রবাল এলাকায় জেলেরা জাল ফেলেন। এসব জালে আটকে সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়। প্রচুর সামুদ্রিক ঘাস, সিউইড ও শৈবাল থাকায় এটি কচ্ছপের খাবারের ভালো জায়গা। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত) মা কচ্ছপরা ডিম পাড়তে আসার সময় জালে আটকা পড়ে মারা যায়।

কক্সবাজারের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘দ্বীপে ভ্রমণে এসে গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে একটি মৃত ডলফিন পড়ে থাকতে দেখি। গত কয়েকদিন ধরে মৃত কচ্ছপ ও ডলফিন ভেসে আসার খবর লোকজনের মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সেন্টমার্টিনে কোনও নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সরকার এটিকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকার আওতায় রেখেছে। কিন্তু জনবল নেই, তহবিল নেই। পরিবেশ অধিদফতর খুব সামান্যই ভূমিকা রাখছে।’

দ্বীপের গলাচিপা গ্রামে ২০০৬ সালে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং গবেষণার জন্য ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরিন পার্ক বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদফতর। পার্কের সাইনবোর্ডে লেখা ‘সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ কার্যক্রম (পর্যবেক্ষণ ও হ্যাচারি)’। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কাছিম ভরে রাখার ঝুড়ি আছে, তবে নেই কোনও কাছিম। ২০১০ সাল পর্যন্ত পার্কটির যথেষ্ট তদারকি থাকলেও এখন করুণ দশা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, ‘দ্বীপে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবেহলার কারণে সৈকতে সামুদ্রিক কচ্ছপ ও ডলফিনের মৃতু বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে কচ্ছপ ও ডলফিন হারিয়ে যাবে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’

দ্বীপের পরিবেশ অধিদফতরের কর্মী আবদুল আজিজ বলেন, ‘দ্বীপে পরিবেশ বিধ্বংসী পর্যটন গড়ে উঠছে। নানা কৃত্রিম কাঠামো, অনেক বেশি আলো, ডিজেল জেনারেটরের শব্দ ও লাউড স্পিকারের কান ফাটানো আওয়াজে ডিম পাড়তে আসা কচ্ছপের পরিমাণ কমেছে। অনেক হোটেল মালিক নিজেদের সুবিধার জন্য সাগর থেকে পাথর তুলে এনে নিচু দেয়ালের মতো গড়ছে সৈকতে। যার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কচ্ছপরা।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ কারেন্ট জালে আটকা পড়েই অধিকাংশ মা কচ্ছপের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে নিষিদ্ধ জাল উচ্ছেদ অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় গত কয়েকদিন আগেও দ্বীপে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। জেলেদের কারণে কচ্ছপ ও ডলফিন মারা পড়ছে। বিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু রোধে নতুন করে কাজ করা হবে।’
হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘মৃত কচ্ছপগুলো দেখা ছাড়া ঠিক কী কারণে মারা যাচ্ছে সেটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে এটা নিশ্চিত যে সমুদ্রদূষণের কারণে কচ্ছপগুলো মারা যায়নি। কচ্ছপগুলো মারা যাওয়ার পেছনে অন্য কোনও কারণ হতে পারে। হয়তো কোনোভাবে আঘাত পেয়েছে। অথবা জেলেদের জালে যখন আটকা পড়ে তখন জেলেরা হয়তো মেরে ফেলে দেয়। এরপর ভেসে সেগুলো সেন্টমার্টিনের উপকূলে আসে। আরেকটি কারণ হতে পারে, ডিম ছাড়ার সময় কচ্ছপগুলোকে কুকুর বা অন্য কোনও প্রাণী আঘাত করেছে।’সুত্র: বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চাচি শাশুড়িকে মা বানিয়ে বাংলাদেশি হতে চান রোহিঙ্গা যুবক!

রোহিঙ্গা যুবক সাহাব উদ্দিন (২৪) বিয়ে করেছেন বাংলাদেশি নারী খুরশিদা আক্তারকে। তাদের ঘরে জন্ম নিয়েছে ...

সেন্ট মার্টিনে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ ...