আবদুল মালেক ,সেন্টমার্টিন থেকে;:
গত বছরের মহাপ্রলয় ঘূর্ণিঝড় 'কোমেন'র আক্রোশে ছিন্নভিন্ন দ্বীপবাসীর আঘাত শুকাইতে না শুকাইতেই আবার বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় 'রোয়ানু'র মুখামুখি প্রবালদ্বীপের মানুষ। প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ঘূর্ণিঝড় 'রোয়ানু'র আঘাতে পাঁচজন আহত, ৩০টি বাড়িঘর বিধ্বংস, অসংখ্য ফসলি জমি বিনষ্ট, তিনটি মাছ ধরার নৌকাডুবে গেছে বলে জানা গেছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু'র কারণে বিপদ সংকেত বহাল থাকায় তিনদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছে দ্বীপাঞ্চলের মানুষ। আজ শনিবার সকাল ৯:৩০ টায় শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণ ও ঝড়োহাওয়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে কোনাপাড়া, পশ্চিম কোনাপাড়া, নজরুল পাড়া, গলাচিপা ও দক্ষিণ পাড়ার প্রায় চার হাজার মানুষ। প্রচণ্ড বাতাসের ফলে গাছপালা ও ঘরবাড়ির টিন উপড়ে গেছে। এসময় গাছের চাপায় ও ফিশিং বোট রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন পাঁচজন। এরা হলেন ১. লম্বা ঘরের মোঃ সাকেরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (১৭), ২. পশ্চিম পাড়ার হোটেল সী প্রবাল রিসোর্ট'র মালিক মোঃ আব্দুল্লাহ(২৯), ৩. পশ্চিম পাড়ার গ্রীণ ল্যান্ড রিসোর্ট'র মালিকের ছেলে মোঃ আয়াছ উদ্দিন(১৯), ৪. কোনার পাড়ার অছি আহমদের ছেলে মোঃ শাহজাহান (২৭), ৫. পশ্চিম কোনা পাড়ার চৌকিদার মোনাফের ছেলে মোঃ তৈয়ব উল্লাহ (২৩)। এদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন মোঃ সাদ্দাম। আহতদের সেন্টমার্টিন ডাক্তার বিহীন হাসপাতালে পল্লীচিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা-সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে প্রচণ্ড বাতাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে পাশের হোটেল রিসোর্ট ও খোলা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন অসহায় পরিবারগুলো। ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা মাঠে অবস্থান নেওয়া মোঃ সাকের বলেন, "প্রচণ্ড বাতাসে বাড়ির ছাউনিটা সম্পূর্ণ উপড়ে গেছে। এখন আহত ছেলেমেয়েদের নিয়ে খোলা মাঠে অবস্থান নিয়েছি"। প্রবল বর্ষণ ও প্রচণ্ড ঝড়োহাওয়ায় সাগরের তীব্র উত্তালে তিনটি ছোটবড় মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মধ্যে রয়েছে পূর্ব পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল হকের ফিশিং বোট, উত্তর পাড়ার মোছালির ডিঙ্গি নৌকা, কোনা পাড়ার সাহেব উদ্দিনের ফিশিং বোট। এদিকে ট্রলার যাওয়াআসা বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংকটে পড়েছে বলে জানান দোকানীরা। সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুস সালাম হতাহতের কথা স্বীকার করে বলেন, আহতদের সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দ্বীপের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব মাষ্টার শামসুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় এই দ্বীপকে রক্ষা করা যাবেনা। দ্বীপের বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব নুরুল আমিন বলেন, "ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে পাঁচজন আহত হয়েছে, বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে, তিনটি ফিশিং বোট ডুবে গেছে এবং কয়েকদিন ট্রলার যাওয়াআসা বন্ধ থাকায় কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে"। একদিকে ভূমিদস্যুদের তাণ্ডব অন্যদিকে প্রকৃতির লীলাখেলায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে দ্বীপবাসী। ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন ও প্রকৃতির ছোবল থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদফতর প্রতি জোড় আহবান জানান এলাকাবাসী এবং সেইসাথে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে রক্ষার্থে জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।