কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে গত এক বছর ধরে। কিন্তু রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে যাওয়ার পর বন্ধ ছিল সব ধরনের গোলাগুলির শব্দ।
তবে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত থেকে আবারও ওপার থেকে ভেসে আসছে গুলির শব্দ।
এরই মধ্যে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জের ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে টেকনাফের কোনো নৌযান যেন বাংলাদেশে জলসীমা ছাড়িয়ে মিয়ানমারের জলসীমায় না যায়, সেজন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। এই নৌরুটে জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করবে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায়।
গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেখানকার জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকার আর্মি (এএ)। তারপর নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে নৌচলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেয় এএ।
এরপরই গত বুধবার টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন।
বিগত সরকারের সময় থেকেই নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন সেগুলো বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমারের কাছাকাছি না যায় সেজন্য বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ রুটে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় যাত্রীবাহী নৌযান চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য সব ধরনের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে’।
বুধবার নিষেধাজ্ঞা জারির পর বৃহস্পতিবারও নাফ নদীতে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেন্ট মার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছানো হয় বিশেষ ব্যবস্থায়। কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেদিন সেন্ট মার্টিন যায় সাতটি পণ্যবাহী ট্রলার।
আরাকার আর্মি মিয়ানমারের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর বন্ধই ছিল ওপার থেকে ভেসে আসা বিস্ফোরণের শব্দ। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত সোমবারের পর ওপার থেকে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আবার গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা আগের মতো বিকট না। ধারণা করা হচ্ছে, স্থলভাগে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বা তাদের সমর্থিত রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আত্মগোপনে থাকা জায়গা ঘিরে এমন গোলাগুলি হতে পারে।
সাবারাং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য শরীফ আহমদ কালবেলাকে বলেন, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার পূর্বে মিয়ানমারের মগনীপাড়া, পতুংজা পাড়া, সাবারংয়ের আচারবুনিয়া এলাকার পূর্বে মিয়ানমারের সুধাপাড়া, উকিল পাড়া, সিকদার পাড়া, ফয়েজীপাড়া এলাকা থেকে আসছে এসব গোলাগুলির শব্দ।
টেকনাফ (২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ কালবেলাকে বলেন, মিয়ানমারে এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশের সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতার পাশাপাশি টহল জোরদার করেছে।