এম মামুন হোসেন::
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে সরকার। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকের লাগাম টানতে শর্ত আরোপ করেছে তারা। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে। এর মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণে নৌযানে পর্যটক পরিবহনে শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রতি বছর অক্টোবরের শেষে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় এসেও শুরু হয়নি পর্যটকের আনাগোনা। অনিশ্চয়তার কবলে রয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের নিজস্ব প্রয়োজনে কাঠের ট্রলার বা স্পিডবোটযোগে টেকনাফ আসা-যাওয়া করতেও প্রতিবন্ধকতা আছে। তাদের আসা বা যাওয়া এখন নির্ভর করছে প্রশাসনিক অনুমতির ওপর। স্থানীয় ছাড়া দেশের কোনো নাগরিকের সেন্টমার্টিনে যেতে হলে লিখিত অনুমতির শর্ত দেওয়া হয়েছে। নতুন করে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকের লাগাম টানতে শর্ত আরোপ করে গত ৭ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের ওই পরিপত্রে বলা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি বা পণ্য নৌযানে পরিবহন করা যাবে না। নিষিদ্ধ ঘোষিত এই তালিকায় ১৭টি পণ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপস (https://saintmartin.abidevteam.com) হতে পর্যটকদের ট্রাভেল পাস (কিউআর কোডযুক্ত) সংগ্রহ করতে হবে। শুধু কিউআর কোডযুক্ত ট্রাভেল পাসধারীদের অনুকূলে নৌযানের টিকেট ইস্যু করতে হবে।
পর্যটকরা একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক দিয়ে প্রস্তুতকৃত পণ্য বা একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের মোড়কযুক্ত পণ্য নৌযানে নিজেদের সঙ্গে বহন করতে পারবেন না। যেমন প্লাস্টিকের স্ট্র, তরল খাদ্যদ্রব্য নাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের তৈরি নাড়ানি, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের মোড়কযুক্ত প্রসাধনীর (শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, তরল সাবান ইত্যাদি) মিনিপ্যাক, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বোতল এবং ক্যাপ, ফিল্টারযুক্ত সিগারেট, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের মোড়কে মোড়ানো খাদ্য সামগ্রী, পলিইথাইলিন এবং পলিপ্রপাইলিন বা মিশ্রণ দ্বারা তৈরি সব শপিং ব্যাগ, ঠোংগা বা ধারক এবং প্লাস্টিকের ব্যানার। এর আগে গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর এক পরিপত্রে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করা হয়, সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচলের বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রাতযাপন করতে পারবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দদূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। বারবি-কিউ পার্টি করা যাবে না।
এরপরই পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্পিডবোট চলাচলওএরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৬
সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় উদ্যোগ করছে না। যাত্রীবাহী কাঠের ট্রলার থাকলেও তা যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন রয়েছে প্রশাসনের অনুমতির। দ্বীপে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোস্ট গার্ড এবং ইউএনওর মৌখিক অনুমতির ওপর নির্ভর করছে এসব ট্রলারের আসা-যাওয়া। তবে এই অনুমতি কেবল দ্বীপের বাসিন্দার জন্য। দ্বীপের বাসিন্দা নয় এমন কেউ যেতে চাইলে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। আর ওই অনুমতি পাওয়া না গেলে কারও ট্রলারে ওঠার সুযোগ নেই।
পাঠকের মতামত