দৃশ্যটি এমন যেন রাতের আকাশ থেকে তারা খসে পড়লো সাগরপাড়ে। যে আলোয় অন্যন্য রূপ পেয়েছে সৈকত। আলো ঝলমল এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। সম্প্রতি ফেইসবুকে ভাইরাল হয় এমন কিছু ছবি ও ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর বিচে রাতের বেলায় দেখা মিলছে জোনাকি পোকার সাদৃশ্য নীলছে আলোর বিচ্ছুরণ।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় কিছু বাসিন্দা এ নিয়ে গত বেশ কয়েদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করলে নেটিজেনের মাঝে সৃষ্টি হয় কৌতূহল, আলোচনা-সমালোচনার। তবে ফেসবুকে অনেকেই এটিকে জেলিফিশ বলে দাবি করেছেন।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আব্দুল মালেক জানান, সেন্টমার্টিনের উত্তর বিচ এলাকায় এ রকম নীল আলোর দেখতে পাই। যা ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাগর পাড়ে আঁচড়ে পড়ছিলো। যেখানে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া সেন্টমার্টিনের আরেক বাসিন্দা নুর তার ফেইসবুক আইডিতে শনিবার একটি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে দেয়া যায় নীল আলোর বিচ্ছুরণ সাদৃশ্য।
মূলত সাগর পাড়ে আঁচড় পড়া নীলছে আলো সাদৃশ্য জিনিসগুলো মূলত কী? জেলিফিশ নাঅন্যকিছু? এ নিয়ে কথা হয় প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারের সঙ্গে। তিনি জানান, নীলছে আলো মত বিষয়টি মূলত "বায়োলুমিনেসেন্স"। বায়োলুমিনেসেন্স হলো এক প্রকার শীতল আলো যা কোনো জীবন্ত জীবের দেহ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। যে সমস্ত জীব বায়োলুমিনেসেন্স তৈরিতে সক্ষম তাদেরকে বায়োলুমিনেসেন্ট জীব বলা হয়।
তিনি আরও জানান, বায়োলুমিনেসেন্স তৈরি হতে হলে বিশেষ কিছু জীবদেহের লুসিফেরিন এবং লুসিফেরেজ নামে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ একত্রিত হয়। প্রোটিন লুসিফেরেজ অনুঘটক হিসাবে কাজ করে, লুসিফেরিনকে বেঁধে রাখে এবং এর জারণকে সহজতর করে, যার ফলে শক্তি বা আলো উৎপন্ন হয়। সেন্টমার্টিনের এই বায়োলুমিনেসেন্স জু-প্লাংকটন, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট।
সমুদ্র বিজ্ঞানী বেলাল হায়দার আরও জানান, বায়োলুমিনেসেন্স তৈরি করে এমন কিছু সামুদ্রিক জীব হলো-ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, স্কুইড, জেলিফিশ, ফায়ারফ্লাই,গ্যাস্ট্রোপোড, ছোটবড় বিভিন্ন মাছসহ খুব অল্প সংখ্যক হাঙ্গর যারা সমুদ্রের এমন গভীরতায় বসবাস করে যেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের সৈকতের গভীরতা কম এবং জীব দ্যুতি ছড়াতে পারে এমন সামুদ্রিক জীব সমুদ্রের গভীরতায় বাস করে সেহেতু আমাদের সৈকতে সচরাচর দেখা যায় না। তবে তাপমাত্রা ঘনত্ব ইত্যাদি কারণে সমুদ্রের নীচের পানি উপরে উঠে এলে জীব দ্যুতি বা বায়োলুমিনেসেন্ট বৈশিষ্ট সম্পন্ন ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক উপরে উঠে আসে এবং ঢেউয়ের সাথে সৈকতে আছড়ে পড়লে তা আমাদের দৃশ্যমান হয়। বিশ্বের বিভিন্ন সাগর মহাসাগরের সৈকতে রাতের বেলায় বায়োলুমিনেসেন্সের অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।
বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণের শেষ স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকনের ও ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা।