অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সেন্ট মার্টিনের বিদ্যুৎ একটা যান্ত্রিক কারণে বন্ধ হয়েছিল, সেটি পরের দিন আবার ঠিক হয়ে গেছে। সেই তথ্য সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে।
সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলের দিকে ঢাকার বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন আ্যান্ড টেকনলোজি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
শহীদ সেলিম বিইউএফটি জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা’২৪ এর ’গ্র্যান্ড ফিনালে এবং পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান’ এ যোগ দেন তিনি। এতে ৩২ টি কলেজ ও ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশ নেন। দুই বিভাগে ছয়টি বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কার তুলে দিতে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেন্ট মার্টিনের বিষয়ে যখন আমাকে প্রশ্ন করা হয়, এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়, যেন সেন্ট মার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এই কথাটা কেউ কোনো দিন আগে শোনেননি। বিষয়টি তা নয়। আপনারা শুনেছেন, আপনারা নিজেরা পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন। আমাদের সময়ে আমরা চেষ্টা করছি, সেন্ট মার্টিনটাকে বাঁচাবার। এইভাবে পর্যটন চললে ২০৪৫ সালের মধ্যে সেন্টমার্টিন যে ডুবে যাবে, সেটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংক্রান্ত জার্নালগুলোতে এসেছে। তখন তাহলে পর্যটন কোথা থেকে হবে। শুধু আপনি সেন্ট মার্টিন দেখবেন, আপনার পরের প্রজন্ম দেখবে না? এখানে যে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে এটা কোনো নতুন আবিষ্কার না। এটা আগে থেকে বলা হচ্ছিল।
তিনি বলেন, আপনি যদি ব্যাংককে যান, ফিলিপাইনে যান, মালয়েশিয়াতে যান, প্রবাল অনেক দ্বীপে রাতে থাকা তো দূরের কথা বরং বড় কোনো জাহাজও ভিড়তে দেয় না। ছোট জাহাজে করে নিয়ে যায়, ঘণ্টাখানেক ঘুরে আপনি চলে আসবেন। দ্বীপ বাঁচলে পর্যটন বাঁচবে। দ্বীপ না বাঁচলে পর্যটন বাঁচবে না। সবসময় আমরা দেখি, যখন আপনি কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন, তখন মনে হয় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আকাশ ভেঙে পড়ার কিছু নাই। কারণ এখানে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটন ঠিকই চলবে। রাতেও আমরা থাকার অনুমতি দিয়েছি। শুধু নভেম্বরে আমরা বলেছি, রাতে থাকবে না। দিনে দিনে চলে আসবে। আর ফেব্রুয়ারিতে কোনো পর্যটন হবে না, ওখানে আমরা একটা সবাইকে নিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের বেশিরভাগই ওখানকার হোটেল মোটেলের মালিক। এটা সত্য পর্যটন যদি বন্ধ করে দিতাম, তাহলে স্থানীয় জনগণের ওপর কিছুটা চাপ পড়তো। এবার যেহেতু কোনো প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হয়নি, ফলে আমরা পর্যটন চালু রেখেছি নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে। শুধু নভেম্বরে রাতে থাকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এটুকু সরকারকে করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব প্রতিবেশ রক্ষা করা। প্রতিবেশ রক্ষা পেলে এটিকে কেন্দ্র করে যে পর্যটন সেটিও রক্ষা পাবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এমন আঘাত আগেও হয়েছে, তবে এবারের প্রেক্ষিতটা ভিন্ন। প্রেক্ষিতটা হচ্ছে, নাটক যারা করছিলেন, তাদের মধ্যে এমন একজন ছিলেন যিনি, যারা প্রতিবাদ করছিলেন, গুলি খাচ্ছিলেন, তখন তিনি এটার বিপক্ষে অবস্থান নেন ও ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন, যেটি এই আন্দোলনকারীরা গ্রহণ করতে পারেননি। এই প্রেক্ষিতে আমি মনে করি, এটি শিল্পের ওপর আঘাত নয়, এটা একটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আমি আশা করি, শিল্পকলার মহাপরিচালক বক্তব্য দিয়ে সেটি স্পষ্ট করেছেন। অবশ্যই ফ্যাসিবাদের দোষরদের সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠে না। একইসঙ্গে শিল্পের ওপর যাতে আঘাত না আসে, সে বিষয়ে সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, খাল দখল, নদী দখল বিষয়ে আমি আন্দোলন করেছি। এই বিষয়ে আমার অবস্থান একই রয়েছে, আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণের পরে রাজউককে বারবার বলেছি, সাইনবোর্ড দিয়ে দিচ্ছে, বালু ভরাট করছে, এগুলো কোনো যুক্তি না, এগুলোর বিরুদ্ধে আপনি কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন সেটিই মানুষের জানতে চায়। আমরা দাঁড়িয়েছি, মামলা করেছি। এই মৌজাগুলো আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কেউ ভরাট করতে পারবে না। সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজউকের। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে রাজউককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিইউএফটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জি. আইয়ূব নবী খান, চট্টগ্রাম বিইউএফটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী, বিইউএফটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফারুক হাসান, জুলাই আন্দোলনে শহীদ সেলিমের বাবা মো. সুলতান তালুকদার