সোমবার ইফতারের কিছুসময় পর হঠাৎ খবর এলো পবিত্র নগরী মদিনায় মসজিদে নববির অদূরেই আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। আঁতকে উঠলাম। একী! মদিনায়! হ্যাঁ সত্যিই। বোমায় অন্তত ছয়জন মারা গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ঢাকা থেকে ওমরা করতে এসেছেন, আমার খুব ঘনিষ্ঠ কাজী আরেফিন বলছিলেন, ঠিক ইফতার সময় বিস্ফরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিল মসজিদে নববি, ইফতার ছেড়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছিল, ছাদের উপর দিয়ে অনেক ধোয়া দেখা যাচ্ছিল, তখনই মুয়াজ্জিন ইকামত দিলেন, সবাই কাতারে দাঁড়িয়ে পড়লেন, ইমাম সাহেব আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেল মসজিদ। কিছু ঘটেছে তা মনে হয়নি।
সৌদি আরবে সোমবার দিনটি বেশ ভয়ঙ্করই বলতে হবে। একই দিন তিনটি জায়গায় বোমা হামলা হয়েছে। অন্য দুটি জেদ্দা ও কাতিফ শহরে। তবে এই বোমা হামলা প্রবাসীদের মধ্যে কয়েকদিন আগে ঢাকায় গুলশানের আর্টিজান বেকারিতে ভয়ঙ্কর পণবন্দি ঘটনায় সৃষ্ট ভয়, উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মক্কায় বুর্জ আল বিলাদ আল মাশাদে কাজ করেন বিলাল, বাড়ি ফেনীতে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দেশ নিয়ে প্রতিদিনই সে কথা বলে। গুলশানের ঘটনায় তার মধ্যে হাহাকার। বেলালের ভাষায়, 'বাংলাদেশে এই ঘটনা! কেউ আর বাঁচবে না। দেশটা শেষ হয়ে গেল'।
বেলালের কথা শুনে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। সত্যিই, আমার সুন্দর শান্ত দেশ তাহলে কোথায় যাচ্ছে? গুলশানের ঘটনা কি শুরু না শেষ? মদিনায় মসজিদে নববির কাছে ব্যবসা করেন স্বপন, বাড়ি কুমিল্লায়। গুলশানে হামলার দিন রাতে টেলিভিশনে নিউজ দেখেন কেঁদে ফেলেছেন। প্রবাসে থেকেও এক অজানা আতঙ্কে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। পরদিন মদিনা ইউনিভার্সিটিতে ঘুরিয়ে দেখানোর সময় স্বপন বলে, বিশ্বে আমাদের ইমেজ এবার শেষ হয়ে গেল। কী হবে এখন? তার ভাষায়, রাজনীতি ও উগ্রতা তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে বাংলাদেশকে।
প্রবাসীরা বরাবরই দেশ নিয়ে ভাবেন। যেকোনো দুর্ঘটনা তাদের কাঁদায়। সৌদি আরবের অসংখ্য প্রবাসীর মধ্যে গুলশানের হত্যা ঘটনায় একটি স্থায়ী ক্ষত তৈরি করেছে। তাদের বিষ্ময়, কিভাবে উচ্চবিত্তের সন্তানরা অধপাতে যাচ্ছে। কেন তারা জঙ্গী হচ্ছে? তাদেন প্রশ্নের শেষ নেই। কারণ দেশকে তারা ভালোবাসেন। শতকষ্টে তারা সচল রেখেছেন দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। -