গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হেরে যাত্রা শুরু করে আর্জেন্টিনা। দলের এমন হতাশার মধ্যে এবার উঠে এলো অধিনায়ক মেসিকে নিয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে মেসির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তর সব তথ্য।
আগামী বিশ্বকাপ অর্থাৎ, ২০২৬ আসরের আয়োজক দেশ ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে আয়োজন করবে এই আসরটি। পরবর্তী বিশ্বকাপ, অর্থাৎ ২০৩০ আসরে কারা আয়োজক হবেন তা নিয়ে এখনও আসেনি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত। আগামী বছর ফিফার ৭৪তম কংগ্রেসে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। আয়োজক নির্ধারণ করা না হলেও আগ্রহের কথা জানিয়েছে কয়েকটি দেশ।
আনুষ্ঠানিকভাবে ২০৩০ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে স্পেন, পর্তুগাল ও ইউক্রেন। তবে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি দুইটি জোট এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইচ্ছের কথা জানায়নি। প্রথমটি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার তিন দেশ- আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে ও চিলি। দ্বিতীয় জোট হিসেবে এই তালিকায় আছে সৌদি আরব, মিসর ও গ্রিস।
দক্ষিণ আমেরিকার জোট আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজক হওয়ার কথা না জানালেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে ঠিকই। ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের মধ্যকার ম্যাচে লুইস সুয়ারেজ পরেছিলেন ২০ নম্বর জার্সি; আর মেসি ৩০ নম্বর জার্সি। সেসময়ই বুঝা গেছে, ২০৩০ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার ইঙ্গিত দিতেই এমন জার্সি পরেছেন তারা।
এই ব্যাপারে দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশের আয়োজক হওয়া প্রচেষ্টার সহ-সমন্বয়ক ফার্নান্দো মারিন পরের বছর সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছিলেন, ‘মেসি ও সুয়ারেজ আমাদের এই প্রচেষ্টায় যোগ দেবেন। আমরা তাকে (মেসি) নিজেদের লক্ষ্যের কথা বলেছি এবং কাজটা করা সম্ভব বলেই মনে করে। সে আমাদের সাহায্য করতে চায়। ’
ঘটনা এই পর্যন্ত হলেই থেমে যেত। কিন্তু মে মাসে এসে মোড় পাল্টান এই পরিকল্পনার মূলে থাকা মেসি। সৌদি আরবকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে তিনি দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে একটি আকর্ষণীয় চুক্তি করেন। সৌদির পর্যটনকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরাই ছিল এই চুক্তির বিষয়বস্তু। একইসঙ্গে সম্পর্কিত দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের সঙ্গে সম্পর্কিত সৌদির ২০৩০ বিশ্বকাপে আয়োজক হওয়ার পরিকল্পনা।
এখন বিষয়টি দাঁড়ায়, নিজ দেশের বিরুদ্ধেই যাচ্ছেন মেসি। কারণ সৌদির ‘ভিশন ২০৩০’ ঘিরে তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ বলছে এরই অংশ হিসেবে দেশটি সৌদির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসলকে কিনে নিয়েছে, গলফের ট্যুর আয়োজন, ফর্মুলা ওয়ানের আয়োজন এবং ২০১৯ সালে হেভিওয়েট বক্সিং ম্যাচ আয়োজন করেছে তারা।
২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে কানাডার দূত হিসেবে কাজ করা ডেনিস হোরাক এ বিষয়ে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে বলেছেন, ‘এই যে খেলাধুলায় (সৌদির) এগিয়ে আসা, এসবই ভিশন ২০৩০ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মেসিকে এর সঙ্গে যুক্ত করে বিষয়টিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টিকে আরও বৈশ্বিক করতে চায় এবং সৌদি নিজেদের ভাবমূর্তিকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করছে। ’
এদিকে মেসির সঙ্গে পর্যটন নিয়ে সৌদি আরবের চুক্তির মেয়াদ ও বিষয়বস্তু কিন্তু এখনো প্রকাশ হয়নি। এই ব্যাপারে মেসির প্রতিনিধিরাও কিছু বলছে না। এমনকি বিষয়টি জানতে সৌদি সরকারকে মেইল করে ‘দ্য অ্যাথলেটিক। ’ কিন্তু তারা কোনো উত্তরই দেয়নি। পরিস্কার না হলেও এখন বোঝাই যাচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো অর্থাৎ, নিজের মাতৃভূমি বাদ দিয়ে সৌদির সঙ্গে তাদের ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে মেসি। অথচ একই চুক্তির ব্যাপারে পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল; যদিও টাকার পরিমাণ ছিল কম। তবে রাজি হননি তিনি।
এছাড়া সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মেসি আরব দেশটির সঙ্গে তাঁর পর্যটন-চুক্তির বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। এই তথ্যও প্রতিবেদনে এনেছে ‘দ্য অ্যাথলেটিক। ’ এখন আর্জেন্টিনা যেহেতু ২০৩০ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হতে চায়, আর মেসি এ বিষয়ে তার জন্মভূমির ‘প্রতিপক্ষ’ দেশকে পর্যটনে সহায়তা করছেন—এই গোটা বিষয়টি পরস্পরবিরোধী কি না, সে বিষয়ে মেসিরই সাবেক সতীর্থ ম্যাক্সি রদ্রিগেজ বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সে তো বটেই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে, কী হবে আমরা তো জানি না। বিশ্বকাপ আয়োজন করা তো সহজ ব্যাপার না। তবে আর্জেন্টাইন হিসেবে আমি চাই নিজের দেশেই বিশ্বকাপের আয়োজন করা হোক। ’ এদিকে ফার্নান্দো মারিনের দাবি, ‘দক্ষিণ আমেরিকার ২০৩০ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার চেষ্টায় খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবেন মেসি। ’ তাহলে বিষয়টি কোথায় দাঁড়াচ্ছে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
পাঠকের মতামত