হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::
স্কুলে যাচ্ছেননা টেকনাফের বহুল আলোচিত ও বাল্য বিয়ের শিকার সেই ফারজানা আক্তার লাকী। বিয়ের ধার্য তারিখ ৩ জুলাই ফারজানা আক্তার লাকীকে স্কুল ড্রেস পরিয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তার ক্লাস রুমে নিয়ে যাওয়া হলেও পরদিন ৪ জুলাই থেকে আর স্কুলে উপস্থিত হচ্ছেননা বলে জানা গেছে। টেকনাফে প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু বিয়ে পন্ড করে দেওয়ায় ফারজানা আক্তার লাকীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তার মা। ফারজানা আক্তার লাকী বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তার রোল নং ৩৫। বাড়ি শামলাপুর আচারবনিয়া এলাকায়।
জানা গেছে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিলেও মা-মেয়ের মানসিকতার এখনো পরিবর্তন হয়নি। ওই বিয়ে বন্ধ হওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছেন সৌদি প্রবাসী হাজ্বী মনছুর আলমের স্ত্রী হাসিনা আক্তার ও তাদের কন্যা ফারজানা আক্তার লাকী (১৪)। মা মেয়ের দাবী জন্ম সনদে আঠারো বছর পূর্ণ হতে মাত্র ৪ মাস বাকী। সেই সুবাদে ও পরিবারে ছেলে সন্তান না থাকায় নিরাপত্তাজনিত বিষয় বিবেচনা করে পাত্র পক্ষ ভালো মনে করেই ওই বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে মেয়ের ধুমধাম হওয়া বিয়েটি পন্ড করা হয়েছে। স্কুল পড়ুয়া ওই ছাত্রীর বিয়ে পন্ড হওয়ায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে মেয়েটি। মেয়ের জীবন নষ্ট হওয়ার ভয়ে এখনো তারা ওই বিয়েতে অটুট রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
হাসিনা আক্তার জানান ৬ মাস আগে পাত্র পক্ষ থেকে ৫০ জনসহ মোট একশ লোকজনকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে স্বর্ণ তুলে দিয়েছিল পাত্রপক্ষ। তখন থেকে পাঁকাপোক্ত হয় পার্শবর্তী উখিয়া মনখালী কোনার পাড়া গ্রামের হাজী নুরুল বশরের ছেলে সৌদি প্রবাসী নুরুল আমিনের সাথে। ছেলেটি বিদেশে থাকায় তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়নি। ওই সময় ধার্য্য তারিখ মতে গত ৩ জুলাই বিয়ের আয়োজন হয়। এ বিয়ের জন্য সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পাত্র যদি অন্যত্র পাত্রী দেখে বিয়ে করে ফেলেন আমার মেয়ের জীবন ও টাকার কি হবে ? এদিকে লাকী বাকী জীবনে লেখা পড়া করবেনা জানিয়ে বলেন ৬ মাস পূর্বে পারিবারিকভাবে পাত্র পক্ষের সাথে সম্পর্ক শুরু হয়। তখন থেকে ফোনালাপের মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে।
শামলাপুর হাইস্কুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মন্জুর লাকী স্কুলে আসেনি জানিয়ে বলেন বাল্য বিয়ের বিষয়টি মেনে নেওয়া যায়না। তাই প্রশাসনকে অবিহিত করা হলে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বিয়েটি বন্ধ করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। এব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তুষার আহমেদ বলেন, বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে বিয়ে বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে অভিভাবকদের সাথে দীর্ঘ আলাপের পর আইনী বাধা থাকায় বিয়েটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ৩ জুলাই বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে উপস্থিত হন টেকনাফ উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তুষার আহমদ। তাঁর সাথে ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার, শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাকসুদ আলম, স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মনজুরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। মাতা হাসিনা আকতারের সাথে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বৈঠক বসে এবং বাল্য বিয়ের কুফল ও আইনগত বাধা সম্মন্ধে তাঁদের অবগত করেন। পরে হাসিনা আকতার থেকে যথাযথ বয়স না হওয়া পর্যন্ত লাকীকে বিয়ে দেয়া হবেনা মর্মে একটি লিখিত মুছলেকা নেন এবং বাল্য বিয়েটি পন্ড করে দেন। এছাড়া বিয়ের বাড়ী থেকে ফারজানা আক্তার লাকীকে স্কুল ড্রেস পরিয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তার ক্লাস রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাল্য বিয়ের বিভিন্ন কুফল ও ক্ষতির দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।