স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসতেন দানা মাঝি। ভারতের দারিদ্র্যপীড়িত ওড়িশার এই বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর। স্ত্রীর জন্য বলতে গেলে তেমন কিছুই করতে পারেননি। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন স্ত্রী। হাসপাতাল নেয়ার পর ধরা পড়ে যক্ষা। আর এই রোগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তিনি। ৬০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর মরদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু গাড়ি ভাড়া নেই। কী আর করা? মরদেহ কাঁধে করেই রওয়ানা দিলেন দানা। চোখে তার জল ঝড়ছে। সঙ্গে করে হেঁটে চলা ১২ বছরের মেয়েটিও কেঁদে চলছে সশব্দে।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
১০ কিলোমিটার সড়ক ধরে দানার এই হেঁটে চলা চোখে পড়েনি কারও। অবশেষে এই কাণ্ড দেখলেন এক টিভি সাংবাদিক। আর ওই সাংবাদিক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ফোন করে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন।
ওই সাংবাদিকই পড়ে এই খবর প্রকাশ করেন। এর একটি ভিডিও তিনি ধারণ করেছেন যা ভারতের জনপ্রিয় সংবাদিভিত্তিক টেলিভিশন এনডিটিভি বেশ গুরুত্ব দিয়েই প্রচার করেছে। দানা মাঝি জানান, তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার আর্থিক দৈন্যের কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, গাড়ি ভাড়া করার মত সঙ্গতি নেই। কিন্তু বারবার অনুরোধ করার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এরপর স্ত্রীর লাশটিকে একটি কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নেন দানা। তারপর মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটেও রওয়ানা দেন ৬০ কিলোমিটার দূরের পথ। মাঝে ওই সাংবাদিকের চোখে পড়তে না হলে হয়ত গোটা পথই এভাবেই চলতে হতো তাকে।
ভারতের এই প্রদেশটিতে সাধারণ জনগণের পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সহজ নয়। বিনা খরচে লাশ পরিবহনের জন্য ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ‘মহাপরায়না’ স্কিম চালু করেছে প্রাদেশিক সরকার। এই স্কিমের আওতায় ৩৭টি সরকারি হাসপাতালে মৃতদের বহনের জন্য পরিবহন সেবা রয়েছে। কিন্তু দানা মাঝির যখন এই সেবা পাওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল তখন তিনি তা পাননি।
প্রদেশটির ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলের সাংসদ কালিকেশ সিং দেও এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে স্থানীয় মন্ত্রীকে ঘটনাটি যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
কালাহাকান্দি ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর ব্রুন্দা ডি বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরই আমরা একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করি। আমরা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে যেন দরিদ্র পরিবারটিক অন্য একটি স্কিমের আওতায় সহায়তা করা হয়।’
দুই সপ্তাহ আগেই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার একজন পথচারীর সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। দুর্ঘটনার শিকার ওই ব্যক্তি সুভাষ নগরের একটি রাস্তার পাশে এক ঘণ্টার বেশি সময় আহত হয়ে পড়েছিলেন। এই তাকে কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। পরে পুলিশের একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়া হলেও ততক্ষণে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। আরও দেখুন: দিল্লির রাস্তায় কাঁদছে মানবতা
ওই ব্যক্তির সড়কের ধারে পড়ে থাকার বিষয়টি দেখেছেন অনেকেই। কিন্তু এড়িয়ে গেছেন সবাই। পরে এ নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই দিনমজুর দানার ঘটনাটিও দাগ কেটেছে লাখো মানুষের কাছে।
ঢাকাটাইমস
পাঠকের মতামত