ডেস্ক নিউজ:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুসহ কক্সবাজারের প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য ৩৩ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে ইউএসএআইডি ও বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭৯ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬০ টাকা। শিশুদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে এ তহবিল দেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অনুদানের অর্থের মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ২৫ মিলিয়ন ডলার (২০৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। ইউএসএআইডি (দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট) দেবে ৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৬৯ কোটি ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬০ টাকা)। এ অর্থের অর্ধেক ব্যয় হবে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে। বাকি অর্ধেক অর্থ ব্যয় হবে কক্সবাজারের শিশুদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের অনুদানের অর্থ ২৫ মিলিয়ন ডলার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। অর্ধেক অর্থ ব্যয় হবে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে। বাকি অর্ধেক কক্সবাজার জেলার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। ইউএসএআইডি-এর ৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার অনুদানের অর্থের অর্ধেক রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে এবং বাকি অর্থ কক্সবাজারের স্থানীয় শিশুদের শিক্ষা ও জীবন মান উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।রোহিঙ্গা শিশুদের উন্নয়নে ইউএসএআইডি-এর অনুদানের অর্থ ইউনিসেফ বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে (এনজিও) ব্যয় করবে। তবে এনজিও নির্বাচনে তদারকি করবে বাংলাদেশ।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে অনুদান দিতে সম্প্রতি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং ইউএসএআইডি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সহযোগিতা করে। অনুদানের অর্থ শুধু রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য নয়, বরং কক্সবাজারের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও ব্যয় করার শর্ত দেয় মন্ত্রণালয়। কারণ, কক্সবাজারের ১৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০০টির ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তাঘাটও নষ্ট হয়ে গেছে। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা শরণার্থীরা এসব স্কুল ভবনে প্রাথমিকভাবে আশ্রয় নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন বিঘ্নিত হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্প নিয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়জনিত বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, বিদ্যালয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়নসহ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যয় করা হবে অনুদানের বাকি অর্ধেক টাকা থেকে।
ইউএসএআইডি তাদের অনুদানের অর্থ বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে (এনজিও) ব্যয় করবে। তবে এনজিও নির্বাচনে তদারকি করবে বাংলাদেশ। ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন, আহসানিয়া মিশনকে দিয়ে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও জীবন মান উন্নয়নে অনুদানের অর্থ ব্যয় হবে। তবে এই এনজিওগুলো সাব কন্ট্রাক্টে অন্যদের দিয়ে কাজ করাবে। সেক্ষেত্রে সাব কন্ট্রাক্টের এনজিও বাছাইয়ে স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) যাচাই-বাছাই করার পর তাদের কাজ দেওয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাব কন্ট্রাক্টের এনজিওগুলো নিয়ে আমাদের একটা ভয় আছে। কী ধরনের শিক্ষা দেয়, রোহিঙ্গা শিশুরা জঙ্গিবাদের দিকে চলে যায় কিনা, তা দেখার জন্য ব্যবস্থা থাকবে।’
রোহিঙ্গাদের প্রভাবে কক্সবাজারের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে যৌথভাবে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।