mokগত ০৬/০৭/২০১৯ ইংরেজি রোজ শনিবার।উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হল”চাকরি ও দক্ষতা উন্নয়ন মেলা”।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত অসরকারি সংস্থায় কক্সবাজার জেলার স্থানীয় শিক্ষিত ও বেকার লোকদের চাকরি নিশ্চয়নের জন্য মুলত এই মেলার আয়োজন। মেলায় চাকরি প্রার্থীদের প্রায় পাচঁ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে।উখিয়া- টেকনাফ উপজেলার মানুষ এর আগে কখনো এরকম ভিন্ন ধর্মী মেলার আয়োজন দেখছে কিনা আমার জানা নেই।দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকদের দাবীর বদৌলতে সরকার এই মেলার আয়োজন করল।স্থানীয়দের অভিযোগ রোহিঙ্গা আগমনে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দারা কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করতে গেলে তাদেরকে অবজ্ঞা করা হয়।বিনা কারণে তাদেরকে চাকরি থেকে ছাটাই করা হয় ইত্যাদি।স্থানীয়দের এসব দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তঃ নেওয়া হল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের(কক্সবাজার জেলার স্থানীয় বাসিন্দা) অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।কথা হল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?২৫ আগস্ট -২০১৭ সালের মিয়ারমারের রাখাইন অঞ্চলে জাতিগত দাঙ্গায় দশ লক্ষাধিক লোক বর্তমানে প্রায় ৩৪ টা ক্যাম্পে বসবাস করছে।এই বিশাল সংখ্যক “বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের “(রোহিঙ্গাদের সরকারি নাম) মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রায় শতাধিক দেশি-বিদেশি অসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের ও অন্যান্য দাতা সংস্থার সহযোগিতায় তাদের জরুরি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।স্বভাবতই বুঝা যাচ্ছে এই কর্মযজ্ঞে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অনেক লোকবলের প্রয়োজন।কিন্তু মানবিক এই কর্মকান্ডে সবার এত আগ্রহ কেন? তার মূল কারণ উচ্চ বেতন/সম্মানি।তার পাশাপাশি দামি গাড়ি আর বিলাসবহুল হোটেল মোটেলে ট্রেনিং সুবিধা এবং বিদেশি লোকদের সাথে ভিনদেশী ভাষায় ভাব বিনিময় ইত্যাদি।কিন্তু প্রশ্ন হল এসব চাকরির মেয়াদ ক’বছর?আমার জানা মতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কর্যক্রমকে সকল সংস্থা জরুরি কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করে।জরুরি কার্য আর কতদিন/বছর ধরে চলতে পারে? জরুরি কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হচ্ছে প্রকল্পভিত্তিক।কোনটার মেয়াদ ৬ মাস কোনটা একবছর।যদি এতেও জরুরি অবস্থার উন্নতি না ঘটে তাহলে অনুদান কিংবা বাজেট প্রাপ্যতা সাপেক্ষে মেয়াদ আরো কিছুদিন বাড়তে পারে।তাও কিন্তু একবছরের বেশি হয়না।এভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু প্রকল্প বাড়ছে আবার কিছু প্রকল্প বন্ধও হয়েছে।সোঁজা কথা বলতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরি সম্পূর্ণ অস্থায়ী। বেতন অনেক বেশি।এই অনেক বেশি বেতনই আমাদেরকে স্থায়ী ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।আমার প্রস্তাব হল রোহিঙ্গা আগমনের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষতি (স্বল্পমেয়াদী,মধ্যমমেয়াদী দীর্ঘমেয়াদী) নিরুপন করে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।যেমন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাশ,ইট ও ত্রাণবাহী অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (শহীদ এটিএম জাফর আলম-আরাকান সড়ক) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এটা হতে পারে স্বল্পমেয়াদী ক্ষতি আবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অতিরিক্ত চাহিদার কারণে পণ্যদ্রবের উর্ধ্বগতি এটা হতে পারে মধ্যমেয়াদী ক্ষতি (ভিন্নমত থাকতে পারে), রোহিঙ্গা আগমনের কারণে আমাদের মানুষ গড়ার কারখানাগুলোর বেহাল অবস্থা হয়েছে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই স্বল্পতা তৈরি হয়েছে।যার প্রমাণ এবছরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল।কক্সবাজার জেলায় সবথেকে কম শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে এই দুই উপজেলাতেই। মানব সম্পদের এই অপূরণীয় ক্ষতিকে আমরা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হিসেবে গণ্য করতে পারি।এভাবে যদি সুক্ষ্মভাবে প্রতিটি ক্ষেত্র বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে অত্র এলাকার লোকজন,পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।লেখা শুরু করছিলাম চাকরি মেলা নিয়ে।বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেও চাকরি মেলায় উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।এত যেমন শিক্ষিত বেকার লোকজন এসেছেন তেমনি অনেক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও এসেছে।উদ্দেশ্য একটাই বেশি বেতনের একটা চাকরি পাওয়া।কিন্তু আমার আশংকা অন্যজায়গায় এই রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে গেলে আমাদের বর্তমান যেসব শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে চাকরির পিছনে ছুটছেন তারা তাদের ভবিষ্যৎ কি গড়তে পারবেন?অনেকে আছেন যারা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভালো প্রতিষ্টানে অধ্যয়ন করে সরকারি ভালো চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল।চাকরির মেলায় দেখি তারাও এসে সামিল হয়েছেন।ফলে তার বড় কর্তার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়েই যাবে।একটা ক্ষণস্থায়ী চাকরির জন্য আমরা আমাদের প্রতিভাবান একটি প্রজন্মকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিচ্ছে যা উখিয়া-টেকনাফ এলাকার জন্য দীর্ঘমেয়াদী তথা স্থায়ী ক্ষতির লক্ষণ।এক্ষতি কখনোই চাকরির মেলায় চাকরি দিয়ে পোষানো সম্ভবপর হবেনা।যদি এই এলাকার শিক্ষিত বেকারদের কোন উপকার কেউ করতে চান তাহলে কেবল চাকরির মেলা না করে সরকারি সকল চাকরিতে অত্র এলাকার শিক্ষিত তরুনদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক কোটা পদ্ধতি চালু করুন।উখিয়া-টেকনাফ এলাকাকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘোষণাপূর্বক সরকার এই কোটা পদ্ধতি চালু করতে পারে।এতে করে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী সমাধান না খুঁজে স্থায়ী সমাধানের নিমিত্তে আবারো পাঠ মুখী হবে বলে আমার বিশ্বাস।আবারো বলছি স্থায়ী ক্ষতি অস্থায়ী চাকরি দিয়ে পোষানো যায়না।উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান মহোদয় যথার্থই বলেছেন উখিয়া -টেকনাফের লোকজন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি চায়না তারা তাদের সোনালি ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃ [email protected]
পাঠকের মতামত