ডেস্ক।। ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম কলেজে ক’দিন পর পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে নগর ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপ। এতে দেশ সেরা এ কলেজটির সুনামের কপালে পড়ছে কলঙ্কের তিলক। হারাচ্ছে ঐতিহ্য। স্বপ্নের চট্টগ্রাম কলেজে ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর থেকে আতংকে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। আর ক্লাস শেষে ছেলে মেয়েরা বের না হওয়া অব্দি দুশ্চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরা।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও যুবলীগ নেতা নুুরুল মোস্তফা টিনুর অনুসারীদের মধ্যে বার বার এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। রনি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও টিনু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র অনুসারী।
গত রবিবার দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নেয় টিনুর অনুসারীরা। অভিযোগ উঠেছে, চকবাজার থানার পরিদর্শক (ওসি) আজিজ আহমেদ পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে টিনুকে। ওসির সাথে টিনুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি চকবাজারের সবাই জানে। অনেকটা ওই কারণেও টিনুর বিরুদ্ধে কেউ উচ্চবাচ্য করতে সাহস পায় না। ওইদিন ওসি বার বার অনুরোধ করলেও টিনুর অনুসারীরা সড়ক ছেড়ে দিতে রাজী হয়নি। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) পরিতোষ ঘোষ ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) শাহ মো. আবদুল রউফ সড়ক থেকে তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কিছুতেই তারা সড়ক ছেড়ে দিতে রাজী হয়নি। বরং উল্টো বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন ডিসি পরিতোষের সাথে।
এ সময় এডিসি রউফকে উদ্দেশ্যে করে টিনু বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচার দেবো। এ কথা বলার পর পর টিনুকে পুলিশ ধরতে গেলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ডিসি ও এডিসির সাথে টিনুর এ ধরনের আচরণে হতবাক হয় উপস্থিত গণমাধ্যমের কর্মীরা।
বার বার সংঘর্ষ হলেও তার কোন সমাধান হচ্ছে না কেন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টচার্য বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা কেন ঘটছে ছাত্রলীগের নেতারা ভাল বলতে পারবেন। তবে এখন থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
রনির দাবি, বহিরাগতরা আসলে কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর বহিরাগতদের নেতৃত্বে রয়েছেন নুরুল মোস্তফা টিনু। আমাদের দাবি বহিরাগতরা কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে পারবে না।
নুরুল মোস্তফা টিনুর দাবি, চকবাজার থানা এলাকায় ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছি আমি। স্থানীয় হিসাবে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগের কর্মীদের সহযোগিতা করছি।
কলেজের অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার বলেন, তারা নিজেরা যদি ঠিক না হয় তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। তবে আমি আশাবাদী ক্যাম্পাসের পরিবেশ আগের জায়গায় ফিরে আসবে।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম ও মহসিন কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাস থেকে শিবির বিতাড়িত হলেও দখলের পর থেকে তিনবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ। সর্বশেষ গত রবিবার দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রতিপক্ষের গুলিতে তিন বহিরাগত ছাত্র আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইসমাইল হোসেন, পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সৌরভ হোসেন বাপ্পী ও ইমাম হোসেন।
কলেজের সিসি ক্যামেরার ঘটনার দিন ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে এক যুবক গুলি ছুড়ছে। টিনুর দাবি- তার অনুসারী ছাত্রদের লক্ষ্য করে রনি গ্রুপের সাইমন গুলি ছুড়েছে। এতেই তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, অন্যদিনের তুলনায় ছাত্র/ছাত্রীদের উপস্থিতি অনেকটা কম। কলেজের গেটে এবং সড়কে রয়েছে পুলিশ পাহারা। বাইরে দাড়িয়ে আছেন বেশ কিছু অভিভাবক। তাদেরই একজন সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, মেয়েটি ক্লাসে গেছে। কখন কোন ঘটনা হয় বলা যায় না। তাই বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।
অক্সিজেন থেকে আসা ইসমাইল হোসেন অপেক্ষায় আছেন ক্লাসে থাকা মেয়ের জন্য। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কলেজে মেয়েকি ভর্তি করে অনেকটা নিশ্চিন্তে ছিলাম। মেয়েটি ¯œাতকে পড়ছে। শুরুতে কলেজের পরিবেশ বেশ ভাল ছিলো। হঠাৎ করে কলেজে কথায় কথায় গোলাগুলি হচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রাম কলেজের বিপরীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে এসেছেন আবদুল আলীম চৌধুরী। তিনি বলেন, রবিবারে সংঘর্ষের ঘটনার কারণে বেলা চারটা পর্যন্ত ছেলেটি ঘরে নিয়ে ফিরতে পারেনি। পরে নিজে এসে ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাই।
স্থানীয় লোকজন জানান, চট্টগ্রাম কলেজকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা হলেও পাশ্ববর্তী মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকরি উচ্চ বিদ্যালয়, কাজেম আলি উচ্চ বিদ্যালয় ও চকবাজারে অবস্থিত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অধ্যায়নরত ছাত্র ছাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়। রবিবার সংঘর্ষের ঘটনার সময় কাজেম আলি উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র/ ছাত্রীদেরকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলের ভেতরেই বসে থাকতে হয়েছে। দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির সময় স্কুলের ছাত্ররা আতংকিত হয়ে পড়ে।
দৈনিক পূর্বকোণ