বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সাভারের আশুলিয়ায় স্বামীকে ‘নিহত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই নারীকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া আটক হয়েছেন তার আরও দুই সহযোগী।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে ওই নারী ও তার এক সহযোগীকে আটক করা হয় বলে জানান আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক। আটক কুলসুম বেগম (২১) মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরী বাংগালা গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে। আটক অন্যরা হলেন ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের মেছের আলীর ছেলে রুহুল আমিন গুলজার এবং তার সহযোগী শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের মাসুম আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম। খবর বিডিনিউজের।
গত শুক্রবার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রথমে মামলার ‘মূলহোতা’ রুহুল আমিনকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কঙবাজারে অভিযান চালিয়ে কুলসুম ও শফিকুলকে আটক করা হয়। রাতেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই রকিবুল ইসলাম তাদের আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসেন।
এসআই রকিবুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার মামলার বাদী কুলসুম বেগমকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়। পরে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এছাড়া সাজানো মামলার ‘মূলহোতা’ রুহুল আমিন গুলজার ও তার সহযোগী শফিকুল ইসলাম থানা হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সরকার পতনের পর ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় মামলাটি (নং–২১) নথিভুক্ত হয়। মামলায় মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে কুলসুম বেগম আত্মগোপনে চলে যান। তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এদিকে স্বামী আলামিন মিয়া মামলার কপি হাতে পেয়ে অবাক হয়ে যান। তিনি ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হয়ে সব ঘটনা খুলে বলেন। পরে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি আবুল হোসেন আশুলিয়া থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। তখন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই রকিবুল হোসেন দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে আলামিনকে আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসেন। রকিবুল ইসলাম বলেন, কুলসুম তার জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা করেছিলেন। অথচ বাদীর স্বামী আলামিন মিয়া এখনও বেঁচে আছেন। পরে ১৩ নভেম্বর আলামিন ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় কুলসুম বেগম সাংবাদিকদের বলেন, চার বছরের সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি সিলেটে থাকতেন তিনি। ২৮ অগাস্ট স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন কুলসুম। গাড়িতে আসার পথে শফিকুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। চাকরির জন্য সাভারে এসেছি বলে শফিকুলকে জানাই। পরে শফিকুল চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে রুহুল আমীনের কাছে নিয়ে যান। সেখানে রুহুল আমীন ও শফিকুল চাকরির জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে দেখা করেন। তখন তারা আমাকে মামলা করতে বলেন। মামলা করলে প্রথমে পাঁচ লাখ ও পরে মাসে মাসে ২০ হাজার করে টাকা ভাতা পাওয়া যাবে বলেও জানান। পরে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মামলা করতে বাধ্য করান। এ ছাড়া কঙবাজারে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলেন।
কুলসুমের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, আমার বোনকে রুহুল আমীন নানাভাবে ভয় দেখিয়েছে। মামলা করার পর রুহুল আমীন বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কুলসুমকে আদালতে নিয়ে যান। পরে বুঝতে পারি তারা একটি চক্র ও মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারে থাকত না। সে থাকত সিলেটে। শফিক ও রুহুল কুলসুমকে ফাঁসিয়েছে বলে দাবি করেন ফাতেমা।
পাঠকের মতামত