আমার এক বোনের দাম্পত্য জীবন সুখের নয়। ওর বিয়ে হয়, বিয়ের পর বাচ্চা হয়। বাচ্চা হওয়ার পর ওর স্বামী অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে ওদের দাম্পত্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। পরে আমার বোন রাগ করে বাবার বাড়ি চলে আসে। তার কিছুদিন পর ওর স্বামী ওকে ফোন করে বলে যে- সে নাকি ওকে তালাক বলেছে আগেই। তাই ওদের মৌখিক তালাক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ও কিছুতেই মনে করতে পারে না যে কবে তালাক বলল! শুধু এটুকু মনে পড়ে- একদিন রেগে গিয়ে ঝগড়া করার সময় ও বলেছিল- এভাবে আর সম্ভব না। তখন ওর স্বামী বলেছিল, ‘কী চাও তুমি! কী চাও? তালাক চাও? দেবো তালাক? দেবো?’ এটুকুই; সেখানে কোনো সাক্ষীও ছিল না।
তারপর ওদের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমার বোন ওর এক কাজিনের সঙ্গে একটি মানসিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং ওরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমার বোনের পূর্ববর্তী স্বামীর সঙ্গে তালাক না হলে কীভাবে বিয়ে হবে! কিন্তু ঐ কাজিন আমার বোনের কাছ থেকে জানতে পারে যে ওর স্বামী ওকে তালাক দিয়েছে, সেটা ফোনে বলেছে। এ কথার উপর ভিত্তি করে উক্ত কাজিন তার পরিচিত হুজুরের সঙ্গে আলাপ করে বলেছে যে, তালাক হয়ে গিয়েছে। এ কথা বলার পর তিন মাসও পার হয়নি। সে আমার বোনকে বলেছে- এখন বিয়ে করা যাবে। সে তখন আমার বোনকে মৌখিকভাবে বিয়ে করে অর্থাৎ শুধু কবুল পড়ে, কোনো কাজী বা কাবিন ছাড়াই তার এক বন্ধু বিয়েটি পড়ায়।
এখন আমার বোন জানতে পেরেছে যে উনি উনার পূর্বের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা যেটা বলেছিল ওটা মিথ্যা। তালাক দেয়নি বরং আমার বোনকে দিয়ে ওর স্বামীকে পরে আইনে তালাক দিতে বাধ্য করে, কিন্তু সে নিজে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়নি। আমার বোনকেও তুলে নেয়নি। কোনো খরচও দেয় না এবং বলে যে ওকে কোনোদিনও তালাক দেবে না সে। এখন আমার বোন তার ভুল বুঝতে পেরেছে এবং সে তার বাচ্চার বাবার কাছে ফিরে যেতে চায়। বাচ্চার বাবাও সব জানে এবং আমার বোনকে মেনে নিতে চায়। আমার প্রশ্ন হলো ওদের দ্বিতীয় বিয়েটি বৈধ কি? এ বিয়ে থেকে তালাকের উপায় কী? আগের স্বামীর কাছে কীভাবে ফিরে যাবে? আমি পারিবারিক ও সামাজিক বা ইসলামিক সমাধান চাইছি।
ANS
.
দেখুন, আমি খুব পরিষ্কার করে, কোন রকম রাখ ঢাক না করে কিছু সৎ কথা বলি। আপনি যে পরিবার, সমাজ বা ধর্ম স্বীকৃত কোন একটি সমাধান চাইছেন… আপনাদের এই সমস্যার আসলে ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ কোন সমাধান নেই। আপনার বোন ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে গিয়েছেন, ধর্মীয় দিক থেকে বিচার করলেও যেগুলো বেশ গুরুতর সমস্যা। সবচাইতে বড় কথা তিনি খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে নিজের সাথে সাথে বাচ্চাটির ভবিষ্যৎকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। আমার স্বামী/স্ত্রী পরকীয়া করেছে বা ব্যাভিচার করেছে বলে আমিও করবো, এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। তাহলে একজন খারাপ মানুষের সাথে একজন ভালো মানুষের পার্থক্য কোথায় রইলো বলুন? আরেক নারীর সংসার ভেঙে তার স্বামীর সাথে সংসার করতে চাওয়াও কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে ভালো কোন কাজ নয়।
আপনার বোনের সমস্যা অনেকগুলো। স্বামীর সাথে আইনত বা ধর্মীয়ভাবে ১০০ ভাগ তালাক হবার আগেই তিনি আরেকটি “বিয়ে” করেছেন। এক্ষেত্রে বলা যায় যে তাঁর আসলে দ্বিতীয় বিয়েটি ধর্ম বা আইনমতে বৈধ নয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিয়েটি যে করেছেন, সেক্ষেত্রেও কোন কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান নি বা বিয়ের কোন রেজিস্ট্রি হয়নি। এসব না করেই তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের নামে একটি অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। আবার যেহেতু প্রথম স্বামীর সাথে তালাকও বৈধভাবে হয়নি… তাই দ্বিতীয় বিয়ে এই দিক দিয়েও ধর্মীয় বা আইনত বৈধ নয়। তবে আপনার বোনের জন্য সবচাইতে ভালো হবে একজন কাজী সাহেবের সাহায্য নেয়া ও একই সাথে একজন উকিলের সাহায্য নেয়া। পূর্বের স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে কী কী করতে হবে সেটি কাজী সাহেব বা উকিলই ভালো বলতে পারবেন। তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করে সবকিছু বৈধ ও সমাজসিদ্ধ ভাবে করার একটা চেষ্টা করা যেতে পারে।
তবে এখানে একটি কথা থেকেই যায়… এই সবকিছু করার আগে আপনার বোনের উচিত হবে নিজের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ভালো করে ভেবে দেখা। পর নারী আসক্তির কারণে স্বামীর সাথে তাঁর সম্পর্ক ভেঙেছিল, বোন কি এখন নিশ্চিত যে এই লোককে পুনরায় বিয়ের পর সেই সমস্যা আবারও হবে না? অন্যদিকে যে কাজিনের সাথে তিনি প্রেম ও বিয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ও পর্যাপ্ত ভরণপোষণ না দেয়ায় যাকে ত্যাগ করছেন, সেই লোকের প্রতি কি তিনি মনের টান মুছে ফেলতে পেরেছেন? প্রথম স্বামীকে পুনরায় বিবাহের পর যদি সেই কাজিন আবার সম্পর্কের দাবী নিয়ে আসে বা তিনি নিজে আবার ওই লোকের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন?
সবশেষে একটিই অনূরোধ থাকবে, খুব ভেবেচিন্তে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেবেন সবাই। খুবই ভালো হবে যদি পরিবারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এখানে একটা ছোট্ট বাচ্চার ভবিষ্যৎ জড়িত। ওর জীবনটা যেন বিনা দোষে নষ্ট না হয়ে যায়, সেই দিকে সবারই খেয়াল রাখতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন-
রুমানা বৈশাখী
লেখক ও রন্ধনশিল্পী
এডিটর ইন চার্জ (প্রিয় লাইফ-সায়েন্স ও প্রিয় আনসার)
প্রিয়.কম
পাঠকের মতামত