ফেসবুকে অদ্ভুত স্বপ্নের কথা লিখেছিলেন কাজী নেহলিন (২২) । কয়েকদিন আগে লিখেন-‘‘কতদিন ধরে আমি খালি আমার বহুল প্রত্যাশিত জিনিসগুলো পেয়ে গেসি এমন স্বপ্ন দেখতেছি আর ঘুম থেকে উঠে যখন দেখি যে ঐই টা স্বপ্ন ছিলো তখন মনটা আসলে ই অনেক খারাপ হয়৷ ইশ মানুষের জীবনটা যদি আসলেই স্বপ্নের মত হত । ”
বৃহস্পতিবারের মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনার পর শুক্রবার সকালে সবার ঘুম ভেঙ্গেছে ঠিকই, মরদেহবাহী গাড়িতে নিথর পড়ে আছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ইংরেজী বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের ছাত্রী নেহলিনের নিথর দেহটি। শুক্রবার জুমার পর জানাযা শেষে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী।
নেহলিন চলে গেলেন, দূ:স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে। নেহলিনের জন্য কাঁদছে তার পরিবার, আইআইইউসির বন্ধু, পুরো চট্টগ্রাম।
নিহত তানজিন পটিয়ার ইশ্বরখাইন এলাকার ডা. আলী আকবরের মেয়ে । বৃহস্পতিবার দুপুরে তানজিনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর শোকে মুহ্যমান পরিবার , বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-বন্ধুরা। প্রতিবাদের ভাষা নেই, কার উপর চাপাবেন এই দায়, কাকে দেবেন বিচার ?
নিহত নেহলিন নিজেও কয়েকদিন আগে ফেসবুকে এসব বাসের বিপদজনক ‘ড্রাইভিং’ নিয়ে লিখেছিলেন। ফেসবুকে স্টাটাসে লিখেন- “লোকাল বাসের ড্রাইভার গুলা আসলেই খুব রাফ চালায়। আজ কয়েকবার এমন আছাড় মারছে মনে হচ্ছিল কোমরের হাড্ডি আর একটাও থাকবেনা, পুরাই গুড়া হয়ে যাবে… তার ওপর বসছিলো পেছনে। ”
আরেক ছাত্রী লিখেন-” আজ কলিজা হাতে নিয়ে হায়ার করা বাসে ব্যাক করলাম ভার্সিটি থেকে। ইচ্ছে করছিলো ড্রাইভার কে কষে দুই চড় লাগাই ২ গালে,স্টুপিড একটা। সে ১৮ মিনিটে বাস সিটি গেইট (মেবি, একটা গেইট আছে না বড়,ওইটা, নাম নিয়ে কনফিউজড) এ নিয়ে আসছিল,স্রেফ ১৮মিনিট! ভাবা যায়? কোনোভাবেই ব্যালেন্স রাখতে পারছিলাম না বসেও, পুরা জার্নি টাতে আতংকে ছিলাম। আল্লাহ মাফ করুক,এসব বেয়াদপ, বেপরোয়া ড্রাইভার এর জন্য আমাদের না আবার কোন ক্ষতি হয়ে যায় কখনো…… ”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইউজিসি’র নির্দেশনার কারণে বহদ্দারহাট থেকে মেয়েদের ক্যাম্পাস সরিয়ে সীতাকুন্ডে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রায় ৩ হাজার ছাত্রীকে সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে বর্তমানে।
ভাত রেডি করো, আমি আসছি :
বৃহস্পতিবার গাড়িতে বসে কাজী নেহলিন মায়ের সাথে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন। ড্রাইভারের বিপদজনক গাড়ি চালানো কথাও বলেছিলেন মা’কে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিলাপ করতে করতে বলেন, মেয়ে তার শেষ ফোনে বলেছিলেন-“আম্মু ড্রাইভার খুব রাফ চালাচ্ছে। তুমি ভাত রেড়ি করো এসে ভাত খাবো। ” হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সামনে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন নেহলিনের মা। বার বার বলছিলেন- আমার মেয়েকে একটু ভাত খাওয়াবো। ও বাস থেকে ফোন করে বলেছে ভাত খাবে।
পাঠকের মতামত