ডেস্ক রিপোর্ট ::
মূল হজ পাঁচ বা ছয় দিন হয়ে থাকে। হজের মূল কার্যক্রম শুরু হয় ৭ জিলহজ রাত অথবা ৮ জিলহজ সকালে হাজীদের মিনায় রওয়ানা হওয়ার মধ্য দিয়ে, যা শেষ হবে ১২ জিলহজ তারিখে। মিনায় যাওয়ার পূর্বে হাজীরা হজের নিয়তে ফরজ ইহরাম পরিধান করেন।
হজ পালনের নিয়তে আগে থেকে যারা মক্কা-মদিনায় অবস্থান করছেন, তাদের বেশিরভাগই মিনায় চলে গেছেন, বাকীরা দুপরের পূর্বেই মিনা পৌঁছাবেন। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ থেকে এখনও যেসব হজযাত্রী সৌদি আরব আসেছেন, তাদেরকে বিমানবন্দর থেকে সোজা মিনায় তাদের নির্দিষ্ট তাঁবুতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এবার হজপালনের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
আরব নিউজ জানিয়েছে, এই কয়দিন মিনা ও এর আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে।
মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। হজপালনকারীদের জন্য ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের পূর্বে মিনায় পৌঁছা সুন্নত। মিনা প্রান্তরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও রাত্রীযাপন সুন্নত আমল। মিনাতে হাজীদের রাত কাটানোর জন্য আলাদা আলাদা তাঁবু রয়েছে।
মিনাকে তাবুর শহর বলা হয়। এটা মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকা। মক্কা থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে যাওয়ার মহাসড়কের পাশে মিনার অবস্থান। মিনার আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার।
হজপালনের অংশ হিসেবে হজপালনকারীদের মিনায় অবস্থান করতে হয়। হজপালনকারীদের জন্য মিনায় প্রায় ১ লাখ অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। এসব তাঁবুতে হজযাত্রীরা অবস্থান করে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক তাঁবুর আলাদা নম্বর দেওয়া রয়েছে।
স্থাপিত তাঁবুর সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মিনায় হজপালনকারীরা ৮ জিলহজ রাত থেকে আরাফাতের ময়দানে চলে যাবেন ৯ জিলহজ। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে মুজদালিফায় যেয়ে রাতযাপন করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন শেষে ১০ জিলহজ তারিখে এখান থেকে ছোট ছোট কঙ্কর সংগ্রহ করে পুনরায় মিনায় যেয়ে বড় শয়তানকে (জামারায়ে উকবা) কঙ্কর নিক্ষেপ করে কোরবানি শেষে মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল (ইহরাম খুলবেন) হবেন।
এর পর মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফ ও সায়ি) শেষে আবার মিনায় যেয়ে (ছোট, মধ্যম ও বড়) শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে হাজিদের। এটা হজের ওয়াজিব আমল।
মিনায় অবস্থান, কোরবানি, শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য মিনায় এই কয়দিন খুব ভিড় থাকে। মিনায় বাদশাহর বাড়ি, রয়েল গেষ্ট হাউজ, মসজিদ, হাসপাতাল ও বিভিন্ন অফিস রযেছে। মিনায় রেলস্টেশন আছে ৩টি।
মিনার সীমানা হলো- পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে মুহাসসার উপত্যকা ও জামরা ‘আকাবা ও মধ্যবর্তী’ স্থান। আর উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে দু’পাশের সুউচ্চ দু’টি পাহাড়।
সাধারণত হাজীরা মক্কা থেকে মিনায় সড়কপথে যান। তবে ট্রেনে যাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এ জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখতে হয়।
হজের প্রধান প্রধান হুকুম-আহ্কামের অধিকাংশই মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে পালিত হয়। এই তিনটি স্থানেরই ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। মিনার ঐতিহাসিক ঘটনা হলো-
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করার আদিষ্ট হয়ে প্রিয়তম পুত্র নবী হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেন। ছেলেকে তিনি স্বপ্নের কথা বললে হজরত ইসমাঈল (আ.) বলেন, আব্বা! আপনি আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করুন, আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি ধৈর্যশীল পাবেন।
পুত্রকে তিনি সঙ্গে নিয়ে মক্কার অদূরে এই মিনাতে পৌঁছলে শয়তান তিন স্থানে তাদেরকে আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে নিবৃত্ত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। এমতাবস্থায় তারা পাথর তুলে শয়তানকে মেরে তাড়িয়ে দেন। তারপর মিনারই একস্থানে পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.) কে কাত করে শুইয়ে দিয়ে তার গলায় ছুরি চালালে আল্লাহর তরফ থেকে তা করতে নিষেধ করা হয় এবং এটা যে পরীক্ষা ছিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য, তা ঘোষিত হয়। এর পর ছেলের বদলে একটি বেহেশতি দুম্বা কোরবানি দেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। পিতা-পুত্রের সেই ত্যাগের ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর হাজিরা মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানি করে থাকেন।
হাজীদের নির্বিঘ্নে হজ পালনের জন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গরমসহ নানাবিধ কারণে কোনো হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছে। মক্কা, মিনা, আরাফাত ময়দান ও মুজদালিফায় বহু অ্যাম্বুলেন্স, অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকার পথে পথে হাজীদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তার জন্য বিভিন্ন ভাষার কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।