২৫ বছর বয়সী উসমান আরশাদ শুধু একটি ছোট ব্যাকপ্যাক এবং একটি কালো ছাতা নিয়ে ২০২৩ সালের হজে সময়মতো অংশ নেওয়ার জন্য মক্কার উদ্দেশে হাঁটছেন।
গত ১ অক্টোবর থেকে আরশাদ তার নিজ শহর ওকারা থেকে এই আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু করেন এবং প্রায় আট মাসের মধ্যে তার স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছাবেন বলে আশা করছেন।
ইরান, ইরাক ও কুয়েত হয়ে সৌদি আরবে পৌঁছাবেন আরশাদ। দীর্ঘ এই পথটি প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। তিনি প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হাঁটছেন।
আরশাদ বলেন, তিনি গত বছর ওকারা থেকে পাকিস্তান-চীন সীমান্তের খুঞ্জেরাব পাস পর্যন্ত ৩৪ দিনে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার হাঁটার পর এভাবে হজযাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
‘যখন আমি খুঞ্জেরাব থেকে ফিরে আসি, তখন আমি হজের জন্য মক্কার দিকে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এটি সেই যাত্রা, যা প্রত্যেক মুসলমানের কাম্য। তাই আমি পায়ে হেঁটে এই স্বপ্নের যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, আমি হাঁটতে ভালোবাসি’ বলেন উসমান আরশাদ।
শান্তির বার্তা প্রচার :
হাঁটার বিষয়ে ভীষণ সচেতন এই যুবক বলেন, তিনি মক্কা যাওয়ার পথে ইরান ও ইরাকের ধর্মীয় স্থানগুলো দেখারও পরিকল্পনা করেছেন। বিভিন্ন দেশের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার অর্থ হলো— ‘আমি পথে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখা করব এবং ইসলামের প্রকৃত বার্তা প্রচার করব, যা শান্তি ও সম্মানের।’
উসমান আরশাদ বলেন, তিনি খ্যাতি নিয়ে চিন্তিত নন। তবে পবিত্র শহরের দিকে হেঁটে নিজের ধর্মীয় দায়িত্ব সম্পন্ন করতে চান এবং শান্তি ও শুভেচ্ছার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
আরশাদ বলেন, এই যাত্রায় তার প্রায় ১৫ লাখ রুপি খরচ হবে। তিনি এক বছর ধরে তার পরিকল্পনায় কাজ করেছেন এবং ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। এ ছাড়া ইরানে পৌঁছানোর আগে সময়মতো ভিসা পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যাগের মধ্যে কয়েকটি কাপড়, মোবাইল ফোন, চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক, ছাতা, টর্চ, পানির বোতল এবং ওষুধ নিয়েছেন বলে জানান উসমান আরশাদ।
তিনি বলেন, ‘আমার যদি অন্য কিছুর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমি তা কিনে নেব। তবে আমি ভারী জিনিস বহন করতে চাই না, যা আমার গতি কমিয়ে দেবে।’
আরশাদ মিডিয়া কমিউনিকেশনের ছাত্র। তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে পুরো যাত্রায় প্রতিদিনের ভিডিও-ছবি ও তথ্য প্রকাশ করছেন। এতে তার ৫০ হাজারেরও বেশি অনুসারী রয়েছে।
তার ভিডিওতে এখন পর্যন্ত ভ্রমণ করা পাকিস্তানের শহরগুলোর প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এ ছাড়া যাত্রাপথে লোকেদের সঙ্গে তার কথাবার্তা ও যা আপ্যায়ন পেয়েছেন তা প্রকাশ পেয়েছে ভিডিওতে।
আরশাদ বলেন, ‘বেলুচিস্তানে আতিথেয়তা অবিশ্বাস্য। লোকেরা খুব স্বাগত জানায় এবং প্রায়শই আমাকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এই যাত্রা একটি গভীর সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও।’
তিনি পথে কয়েক ডজন লোকের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং অনুপ্রাণিত করেছেন। তার ব্যাকপ্যাকে লাগানো পোস্টার দেখে গাড়িচালক ও পথচারীরা প্রায়ই আরশাদকে অভ্যর্থনা জানাতে, করমর্দন করতে এবং তাকে ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।
ওই পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘ওকারা থেকে মক্কায় হেঁটে হজের উদ্দেশ্যে’। তিনি বলেন, অনেক মানুষ শুধু তাদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এবং আমাকে পবিত্র মক্কা নগরীতে তাদের সালাম জানাতে বলেন।’
উসমান আরশাদ বলেন, ‘তারা আমাকে উত্সাহিত করে এবং কেউ কেউ বলে যে আমার ভ্রমণ তাদের স্বপ্নযাত্রা করার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। মানুষের কাছ থেকে শুভেচ্ছা ও দোয়া পেয়ে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’
আরশাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহরে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের বাড়িতে থাকেন। কিন্তু শহরে কেউ না থাকলে রাত্রিযাপনের জন্য মসজিদ বা আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত আপডেটের কারণে অনেক লোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের বাড়িতে থাকার জন্য এবং খাবার খেতে প্রস্তাব দেয়।
তবে পাকিস্তান সীমান্ত ছেড়ে চলে গেলে হোটেলে থাকবেন এবং তাঁবু করেও থাকতে হতে পারে বলে জানান তিনি। যদিও তিনি মক্কার দিকে হাঁটছেন, তবে তিনি বলেন, দেশে ফিরবেন আকাশপথে।
আরশাদ পাকিস্তান থেকে হেঁটে মক্কায় যাওয়া প্রথম ব্যক্তি নন। ২০১৩ সালে করাচি থেকে মক্কায় হেঁটে গিয়েছিলেন খারলজাদা কাসরত রাই নামে এক ব্যক্তি। তিন মাসের সফরের পর তিনি মক্কায় বীরের অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন।
সূত্র : গালফ নিউজ