ঢাকা : ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী। রাজধানী জুড়ে তাদের দু’জন কিংবা চার-পাঁচ জনের এক একটি গ্রুপ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ি, বাস, এমনকি ট্রেনেও চাঁদাবাজি করছে।
চাঁদা না দিলে তারা চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও হাতে তালি দিয়ে, সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে। এমনকি তারা চাঁদার জন্য কখনও কখনও সবার সামনেই বিবস্ত্র হয় ফলে মানুষ বাধ্য হয়েই অসহায়ের মতো মানুষ ১০০ থেকে ৫০০টাকা দিয়ে থাকে।
বনানী-মহাখালী বাসস্ট্যান্ড ও কাকরাইল সিগন্যালসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তারা রঙঢং করে ঈদের আগাম সেলামী কিংবা বকশিসের কথা বলে টাকা আদায় করছে। ইদানীং তাদের মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ।
রাজধানীতে ভুক্তভোগীরা বলছেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। পুলিশও অনেক ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। তাহলে আর আমরা কোথায় যাব। আর সেই কারণেই তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিজড়াদের টাকা তোলার বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করে থাকেন। জীবন-যাত্রার জন্য তাদের কিছু চাহিদা আছে। কিন্তু তার মানেই এই নয় যে তারা চাঁদাবাজি করে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
এদিকে তাদের জীবন-যাত্রার জন্য মানুষ সাধ্যমতো টাকা ও বিভিন্ন মালামাল দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে গত কয়েক বছর হিজড়াদের আচরণ বদলে গেছে। আগে শুধু তারা সাহায্য চাইত আর এখন জবরদস্তি করে চাঁদা আদায়ে পরিণত হয়েছে।
কাকরাইল সিগন্যালে প্রতিদিনই হিজড়াদের উৎপাত সহ্য করতে হয় যাতায়াতকারী যাত্রীদেরকে। “আপু কিছু দাও”- কখনও সাহায্য দাবি করছে তারা। এছাড়া যদি কেউ টাকা দিতে রাজি না হচ্ছে, তখন তার সাথে তর্ক জুড়ে দেয় এ সম্প্রদায়। ইদানীং তারা সংঘবদ্ধভাবে চড়াও হচ্ছে রেলস্টেশনগুলোতেও। যাত্রীদের কাছে হাজির হয়ে তারা ১০০-২০০ টাকা হারে হাতিয়ে নিচ্ছে। বিমান বন্দর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, হিজড়াদের চাঁদা তোলা সহজ তাই অনেক সক্ষম লোকও হিজড়া সেজে এই ব্যবসায় নেমেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় হিজড়াদের কমবেশি উৎপাত থাকলেও চলন্ত যানবাহনে তাদের অনাকাঙ্খিত উপস্থিতি নগরবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে জানা যায়, হিজড়াদের মধ্যে কারও কারও রয়েছে অঢেল সম্পদ। তবে নানা মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছে অনেক হিজড়া। তবে হিজড়াদের এমন দৌড়াত্বে অতিষ্ট হয়েও তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে থানায় শক্ত কোনো অভিযোগ করেন না কেউই।