মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। দিন দিন বৈশ্বিক পট পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক সংকটের ফলে রোহিঙ্গাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বৃহৎ দাতা সংস্থা ও দেশ সমুহ। এর ফলে এ বিরাট জনগোষ্ঠির ভরণ পোষণে দায়িত্ব আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে থাকা বাংলাদেশ সরকারের ঘারে এসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির বাংলাদেশে। উখিয়া-টেকনাফ ও ভাসানচরে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এসব বাসিন্দা এখন বাংলাদেশের জন্য মারাত্বক বোঝা হয়ে উঠেছে।
কিন্তু আসল প্রশ্নটি হচ্ছে, এতে নতুন কী আছে? আর এনিয়ে এখন উদ্বেগও বাড়ছে কেন?
প্রথমত, ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র– তাদের বিদ্যমান সব বৈদেশিক সহায়তাকে বন্ধ করেছে। ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক এই ‘স্থগিতাদেশ’ ইতোমধ্যেই নাজুক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থায়নের পরিস্থিতিকে আরও তলানিতে নেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়ন সক্ষমতাও সংকুচিত অবস্থার মধ্যে আছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে, মূল্যস্ফীতি ভোগাচ্ছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিও মন্থর— এই প্রেক্ষাপটেই রাজস্ব আদায়ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ এধরনের টানাটানির মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করাটাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্ধিত অবদান চায় বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে ঢাকায় সফররত ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বৈঠকে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর এর প্রণীত জয়েন্ট রিসপন্স প্ল্যান (জেপিআর) পর্যালোচনায় উঠে আসে কঠিন এক বাস্তবতা; তহবিল কমছে, এবং তা হচ্ছে দ্রুত গতিতে।
২০২৪ সালে জেআরপির আওতায় প্রায় ৮৫ কোটি (৮৫২.৪ মিলিয়ন) ডলার তহবিল সংগ্রহের আবেদন করা হয়েছিল, এই লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬৪.৪ শতাংশই পাওয়া যায়। এরমধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্র একাই ৩০ কোটি (৩০১ মিলিয়ন) ডলারের ত্রাণ সহায়তা দেয়, যা ছিল মোট তহবিলের ৫৫ শতাংশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসার আগে ইউএসএআইডি কোনো বাধার মুখেও পড়েনি। এছাড়া, ২০২৪ সালে ইইউ মাত্র ৬ কোটি ২৪ লাখ (৬২.৪৭ মিলিয়ন) ডলার সহায়তা প্রদান করে, যা ছিল জেআরপির ১১ শতাংশ, এবং ২০২৩ সালে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জরুরি সহায়তাসহ মানবিক ত্রাণ দেয় মাত্র ৪ কোটি ৬৭ লাখ (৪৬.৭ মিলিয়ন) ডলার, যা জেআরপির সাড়ে ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সংকলিত নথি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জন্য ৯৩ কোটি ডলারের বেশি (৯৩৪ মিলিয়ন) তহবিলের প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করছে ইউএনএইচসিআর।
আঞ্চলিক রোহিঙ্গা সহায়তায় ২০২৭ সালের আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২৫০ কোটি ডলারের বেশি দিয়েছে, এরমধ্যে শুধু বাংলাদেশেই দেওয়া হয়েছে ২১০ কোটি ডলার। প্রায় ১৩০ কোটি ডলার আসে দেশটির জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন (পিআরএম) ব্যুরোর মাধ্যমে। ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দেওয়া এক বিবৃতি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
একইদিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া প্রায় ২০ কোটি ডলারের (১৯৯ মিলিয়ন) নতুন সহায়তা ঘোষণা করেন।
এই প্যাকেজের প্রায় ৭ কোটি ডলার পিআরএমের মাধ্যমে এবং প্রায় ১৩ কোটি ডলার (১২৯ মিলিয়ন) ইউএসএআইডির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার কথা— যারমধ্যে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের অধীন কমোডিটি ক্রেডিট কর্পোরেশনের মাধ্যমে খাদ্য ক্রয় ও বিতরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
রোববার বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে মার্কিন অর্থায়ন হ্রাস এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গার জনসংখ্যার ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে, জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রদান করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রেনে বিরতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াসহ, অন্যান্য অনেক দেশে মানবিক ও উন্নয়ন কর্মসূচিকে প্রভাবিত করছে। স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও, রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল রয়েছে। তাদের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার, দাতা এবং অংশীদারদের উদারতার জন্য জাতিসংঘ অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
(রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানে) ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে সহায়তা প্রদানকারী সবচেয়ে অবিচল অংশীদার এবং বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় দাতাদের মধ্যে ছিল। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সম্প্রদায় যুক্তরাষ্ট্রের এসব সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ এবং আশা করে যে দেশটি শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে– এটি শিগগিরই আবার চালু করবে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় (তহবিলের অভাবে) গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবা প্রদানের ব্যাঘাত ঘটছে, যারমধ্যে জীবনরক্ষাকারী সেবাও রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে সাড়া দেওয়া খাতভিত্তিক সমন্বয়কারী ও অংশীদাররা এসব প্রতিকূলতাগুলোকে চিহ্নিত করছেন এবং এগুলোর প্রভাব হ্রাসের জন্য যেখানে যেখানে সম্ভব সাময়িক ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
অনেকখাতে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। যেমন স্বাস্থ্য ( হেপাটাইটিস সি’র টিকা ক্রয়, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক পণ্য ক্রয়, প্রতিবন্ধীদের সেবা ইত্যাদি); পানি ও স্যানিটেশন (সাবান, পানি সরবরাহ বা নিস্কাশন ব্যবস্থাপনা), সুরক্ষা (জিবিভি ও সিপি সেবা), শিক্ষা (রোহিঙ্গা শিবির ও আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষামূলক কার্যক্রম স্থগিত রাখা), জীবিকা (বিভিন্ন ধরনের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ বন্ধ হওয়া)। এসব সেবা বঞ্চিত হওয়ার বাইরেও অনেক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে, যা আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ করার দিকেই বর্তমানে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সম্প্রদায়ের মনোযোগ রয়েছে। যার ভিত্তিতে যেসব ঘাটতি পূরণ সবচেয়ে জরুরি (প্রয়োজনে অন্যখাত থেকে বিদ্যমান সম্পদ দিয়ে) সেগুলো মেটানো, এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে আরও দক্ষতা অর্জনকে অব্যাহত রাখার মতো প্রচেষ্টা আছে। বাংলাদেশ সরকার, শরণার্থী এবং সংশ্লিষ্ট মানবিক ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালে অনুরোধকৃত তহবিলের মাত্র ৫০ শতাংশ পায় বাংলাদেশ— এই ঘাটতি কয়েক বছর ধরেই বেড়ে এমন জায়গায় পৌঁছেছে। ২০১৭ সাল থেকে যে পরিমাণ তহবিল প্রয়োজন, তার সঙ্গে প্রকৃত অর্থায়নের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। ২০১৭ সালে এই ঘাটতি ছিল ২৭ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৪১ শতাংশে এবং এরপর ২০২২ সালে ৫১ শতাংশে পৌঁছায়। এটি বৃহত্তর বৈশ্বিক প্রবণতারই অংশ, যেখানে উপলদ্ধ তহবিলকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে মানবিক সহায়তার চাহিদা, এতে ঝুঁকিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলো আরও বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দেশটির বৈদেশিক সহায়তা প্রদান ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। এই সংবাদে— আফ্রিকা থেকে ফিলিস্তিন, সিরিয়া থেকে মিয়ানমান ও বাংলাদেশ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সরকার ও এনজিওগুলোর মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
এর প্রভাবও হয় তাৎক্ষণিক। গত ৩১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নপুষ্ট আরও বেশকিছু এনজিও’কে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের এনজিওখাতের অভ্যন্তরীণরা বলছেন, এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর।
নাম না প্রকাশের শর্তে জাতিসংঘের একটি সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থায়ন করেছে, এরমধ্যে খাদ্য ও আবাসন ছাড়া—অন্যগুলো এরমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফোলে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবিকা-সংক্রান্ত সেবাগুলো মারাত্মক হুমকির মুখে।”
চলতি বছর ১৮ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল ১০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক এনজিও তাদের জনবল এরমধ্যেই কমাচ্ছে, অথবা তা করার পরিকল্পনা করছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করা ইউনিসেফের একজন কর্মকর্তাও নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “২০২৪ সালে আমাদের অর্থায়নের ৩০ শতাংশ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কিন্তু, এখন আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে— এবছর কোনো তহবিল পাব কিনা?
বর্তমানে ১১৭টি অংশীদার— জাতিসংঘের ১০টি সংস্থা, ৫৮টি বাংলাদেশি এনজিও, ৩৫টি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং ১৪টি জাতীয় ও বৈশ্বিক সংগঠন— কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট ১৯৫টি প্রকল্প পরিচালনা করছে।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা সহায়তা বাবদ বাংলাদেশও বিপুল মানবিক সহায়তা দিয়েছে, যার বেশিরভাগটাই দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে— দুর্বল এই জনগোষ্ঠী যাতে জরুরি ত্রাণ পায় সরকার তা নিশ্চিত করেছে।
কক্সবাজারে জনাকীর্ণ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর ওপর চাপ কমাতে, বাংলাদেশ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তরিত করেছে, যেখানে নিজস্ব অর্থায়নের ৩৫ কোটি ডলার দিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছে।
বর্তমানে, কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে, প্রতিবছর ৩২ হাজার নতুন শিশু যোগ হচ্ছে এ জনসংখ্যায়। গত সাত বছরে এই শিবিরে ২ লাখেরও বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। এদিকে, মিয়ানমারের আরও ৬০ হাজার নাগরিক সম্প্রতি সেখানকার সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
২০২২ সালে আন্তর্জাতিক এক অনুষ্ঠানে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সেবছর রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ ১২২ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
তবে ২০২৪ সালের ১৩ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মইনুল ইসলাম বলেছিলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার এই জনগোষ্ঠীর পেছনে ২০২২ সালে বাংলাদেশ মোট ১৬৯ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
আন্তর্জাতিক তহবিলের উৎসে যখন ভাটা পড়ে, তখন রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে এমনকী বিশ্বব্যাংকের থেকেও প্রায় ৪১ কোটি ডলার (৪০৭ মিলিয়ন) ঋণ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু, বর্তমানে বাংলাদেশই রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে। এই অবস্থায় সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয় দুয়েই টান পড়ছে। তাই প্রশ্ন উঠছে– এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আর কীই-বা করার আছে?
বাংলাদেশের জন্য উত্তরটি স্পষ্ট, আর তা হলো– ইইউকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জ়াহিদ হোসেন মনে করছেন, এই কাজটাও সহজ হবে না। চলমান ইউক্রেন সংকটের মধ্যে — ইইউয়ের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে নিজ মহাদেশের সুরক্ষা।
জাহিদ হোসেন বলেন, এই চ্যালেঞ্জকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ। যুক্তরাষ্ট্র ইইউকে তার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে, কারণ ওয়াশিংটন আর ন্যাটোর অধীনে ইউরোপীয় নিরাপত্তার খরচ টানতে চায় না। যেমনটা অতীতে করে এসেছে। এরপরেও তহবিলের জন্য ইইউকে চাপ দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কাছে অন্য বিকল্পও তেমন নেই।
তিনি বলেন, “যেহেতু রোহিঙ্গা সংকট একটি আঞ্চলিক সমস্যা, তাই চীন ও ভারতেরও উচিত বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষত বাংলাদেশের উচিত চীনের সাহায্য নেওয়া। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে এবং শুধু বাংলাদেশের ওপরই ভার চাপালে হবে না।”
উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ-মায়ানমারের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে আসে। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে কক্সবাজারে আসে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা গণহত্যা চালানোর পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসে আরো সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সাথে আগে থাকা উল্লিখিতরা মিলে কক্সবাজার জেলা এখন ১৩ লাখ রেহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের ছয় লাখ এখন আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।