ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৪/০৩/২০২৫ ১০:০৭ এএম , আপডেট: ১৪/০৩/২০২৫ ১০:৪০ এএম

প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (কমেক) আলোর মুখ দেখেনি। নানা জটিলতার বেড়াজালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে ১০ তলা বিশিষ্ট ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের নিমার্ণ প্রকল্প।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক সফরে কক্সবাজার আসছেন। তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এই সফরকে ঘিরে ১৭ বছর ধরে আটকে থাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন নিমার্ণ প্রকল্প দ্রুত শুরু করা এবং হাসপাতাল চালুর দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। এই উপলক্ষে চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের একটি ছোট ইউনিটে ২০০৮-২০০৯ সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে শুরু হয় কমেকের যাত্রা। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের নভেম্বরের শুরুতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে অস্থায়ী কমেক হাসপাতাল ঘোষণা করে। এরপর ২০১১ সালের কক্সবাজার শহরের জানারঘোনা এলাকায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভবন নিমার্ণ শুরু হয়। ২০১৭ সালে ওই স্থায়ী ক্যাম্পাসে কলেজ কার্যক্রম চলছে। ওই ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজারে সফরে আসা প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি ভবন নির্মাণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) কারণে কমেক হাসপাতালের নির্মাণকাজ আটকে রয়েছে। বৈদেশিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরে তা বাতিল করা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বরে প্রকল্পটি নিমার্ণ ক্রয় রিভিউ করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রেরণ করে। ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগের গণপূর্ত অতিরিক্তি প্রধান প্রকৌশলীর সভাপতিত্বে রিভিউ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিভিউ প্রস্তাবটি সিসিডিপি অনুমোদনের জন্য গত ২৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও ওখানে আটকে রয়েছে ওই প্রকল্প।

পরে শুক্রবার অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক সফরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন দ্রুত নিমার্ণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি প্রদান শেষে সংবাদ সম্মেলেন তাদের দাবির যৌক্তিকতা উপস্থাপন করেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, এখনও কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে অস্থায়ী কমেক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ক্লাস নিতে আসতে হচ্ছে। যা চরম ভোগান্তির। কক্সবাজারে বর্তমানে ২৮ লাখ মানুষ। এখানে রয়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। ২৫০ শয্যার কক্সবাজার সদর হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবার জন্য পর্যাপ্ত না। এখানে রয়েছে নানা সংকটও।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখানে হেমাটেলজি, হেপটোলজি, আপথ্যালমলজি, সাইকিয়াট্রি, নিউরোমেডিসিন, নিউরোসার্জারি, এনআইসিইউসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সংকট রয়েছে। নেই কোন বিশেষায়িত বার্ণ ইউনিটও। যার জন্য অনেক রোগিকে প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামে পাঠাতে গিয়ে মারাও যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতি দ্রুত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন নিমার্ণ জরুরি বলে জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সভাপতি ডা. হিশাম, শিক্ষার্থী আছিবুল হক, রাহাত হোসাইন, আহসান শাকীক, শাহাদাত হোসেন হৃদয়, ফাহিম হাসান নিলয় প্রমুখ।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের বড় ইস্যু রোহিঙ্গা সমস্যা। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবায়। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক। তাই কমেকে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ হলে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সেবা বাড়বে। চিকিৎসা জট কমবে সদর হাসপাতালে।

পাঠকের মতামত

ড. ইউনূস ও গুতেরেসের কক্সবাজার সফর আজ, লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশে ...

রোজা রেখেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব, ইফতার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

চারদিনের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সফরে ঢাকায় এসেছেন সাবেক পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের দশম এই মহাসচিবের এটি ...

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর: নিরাপত্তার চাদরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত ২০ নম্বর এলাকার চারপাশ অনেকটা পাহাড়বেষ্টিত। যেখানে একটি মাঠে ...

এপ্রিল থেকে খাদ্য সহায়তা নামছে অর্ধেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থিত ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্যের লড়াই যেন ‘স্থায়ী সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। ...