ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মৌসুমী আক্তার সালমা ও দিনাজপুর-৬ আসনের সরকার দলীয় এমপি শিবলী সাদিকের বিবাহ বিচ্ছেদ এখন মিডিয়ার টপ অব দ্য কান্ট্রি। সম্পর্কের টানাপোড়েন, কেন এই বিচ্ছেদ, একমাত্র মেয়ে স্নেহা কার কাছে থাকবে- এসব কিছু নিয়ে মুখোমুখি সালমা। লিখেছেন এ এইচ মুরাদ।
আপনার সাবেক স্বামী শিবলীর অভিযোগ, আপনি নাকি উগ্র জীবনযাপন করতেন।
আমি কেমন উগ্র জীবনযাপন করছি সেটা কি আপনারা জানেন না? আমি কেমন পোশাকে কীভাবে চলাফেরা করি, তাও সবাই জানেন। আমার দুঃখটা হচ্ছে নিজের দোষগুলো ঢাকার জন্য সে আমার নামে মিডিয়ার কাছে মিথ্যা বলছে।
আপনি নাকি রাত করে বাড়ি ফিরতেন।
আমি শেষ লাইভ শো করেছি আরটিভিতে। সেদিন আমার গুরুজীর (শফি মন্ডল) সঙ্গে অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলাম। রাত ২টায় অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। আমার সঙ্গে আরো ছিলেন- ক্লোজআপ ওয়ানের লিজা, আমার বাবা ও মামা। একটা চ্যানেল থেকে যখন আমাকে তাদের অনুষ্ঠানে গান গাইবার জন্য বলা হয়, তখন একজন শিল্পী হিসেবে কি আমার সেখানে যাওয়া উচিত না? রাতে কোনো অনুষ্ঠানে গান গাওয়া মানে যদি নোংরামি হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
টাকা নেয়ার জন্যই নাকি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
দু’জনেরই সমাজে থাকতে হবে। সবারই ব্যক্তিগত জীবন আছে। উনার তো অনেক টাকা, তার কাছে তো লাখ লাখ টাকা। সে তো স্বপ্নপুরীর (পিকনিক স্পট) মালিক, দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি। আপনারা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, কেনো তাকে ছেড়ে সালমা চলে গেলো। কী এমন অত্যাচার করেছে আমাকে। যে কারণে আমি তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।
২০ লাখ টাকা দিয়ে কি ইজ্জত পাওয়া যায় ভাইয়া? ক্লোজআপ ওয়ান হবার পর থেকেই একটানা শো করছিলাম। একজন ফোক শিল্পীর প্রতি মাসে ১০/১২টা শো থাকেই। সেখান থেকে পাওয়া টাকার অংকটাও কম না। যদি অর্থের পেছনেই ছুটতাম, তাহলে এমন ক্রেজের সময় সবকিছু ছেড়ে কেন সংসার আঁকড়ে ধরেছিলাম?
কার পক্ষ থেকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত আসে?
সে তার নিজ উদ্যোগে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করেছে। তার লোকজন দিয়ে চাপ দিয়েছে। আমাকে টাকা দিয়ে বলা হয়েছে- আমি যেন তাকে ডিভোর্স দেই। আমি সম্পর্ক রক্ষার জন্য লাস্ট পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। তার হাত ধরে বলেছি- শিবলী তুমি একবার শুধু বলো, আমার জন্য সবকিছু ছাড়তে পারবা। কিন্তু উল্টো সে বলেছে- আমাকেই সবকিছু ছাড়তে হবে। এমনকি সে যদি বিয়েও করে তবুও আমি কিছু বলতে পারবো না। এ কেমন জীবন, যেখানে আমার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না?
স্নেহা কার কাছে থাকবে?
৩ মাস মেয়েকে দেখতে দেয়নি সে। অনেক কান্নাকাটি করেছি। তবুও দেখতে দেয়নি। একটা পর্যায়ে আমি তাকে (শিবলী) বলেছি- একজন মেয়ে হিসেবে না, একজন মা হিসেবে আমার সন্তানের জন্য লড়বো। মা হিসেবে আমারও অধিকার আছে। সন্তানের জন্য যেখানে যেতে হয় আমি যাবো। যা করতে হয় করবো। আমার কাছ থেকে মেয়েকে কেড়ে নিয়ে ফেসবুকে আজেবাজে কথা বলেছে। ক্যারিয়ারের জন্য আমি নাকি সন্তানকে ছেড়ে এসেছি। কিন্তু এসব মিথ্যা, আমার কাছ থেকে সন্তানকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। ছোট্ট মেয়ে আমার, ও কি মাকে রেখে একা থাকতে পারে? সবশেষ ডিভোর্সের দিন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সপ্তাহে তিনদিন করে স্নেহা দু’জনের কাছে থাকবে।
বাড়ি ছেড়েছিলেন কেন?
আমি রাতের পর রাত তার জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সে আমার কাছে আসেনি। সে কখনোই আমাকে সময় দেয়নি। সবসময় রাজনীতির দোহাই দিতো, অন্য রাজনীতিকদের কি বউ-বাচ্চা নেই? এতো অবমূল্যায়ন কেমনভাবে সহ্য করবো? আমার যদি ইউনিভার্সিটি যাওয়া দোষ হয়ে থাকে, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা দোষ হয়, মা-বাবাকে অপমানের প্রতিবাদ করা যদি দোষ হয়, বউ হিসেবে তার ভালোবাসা চাওয়া অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে সেই অপরাধ আমি মাথা পেতে নিলাম। ও ভালো থাকুক, ওর জন্য আমার দোয়া রইলো। একদিন হয়তোবা বুঝবে, তখন আর ফেরার সুযোগ নেই। সেই পথ সে নিজেই বন্ধ করে দিল।
পাঁচ মাস ধরে নাকি আপনি বাড়ির বাইরে।
এ সময়টা মা-বাবাকে নিয়ে একটা ভাড়া বাসায় ছিলাম। ভেবেছি, ও এসে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সে আশাতেই ছিলাম। আমার সঙ্গে একবারও যোগাযোগ করেনি। কখনো বলেনি- সালমা আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও। উল্টো আমাকে তার লোকজন এসে ডিভোর্সের চাপ দেয়। বলে, ডিভোর্স না দিলে আমরাই পাঠাচ্ছি।
জানতাম ভালোই আছেন…
প্রায়ই ড্রিংক করে যেকোনো বিষয়েই আমাকে মারধর করতো। আমি মেয়ে বলে তার অত্যাচার সহ্য করবো, এমন ভাবার কারণ নেই। সমাজের কথা ভেবে ছ’টা বছর গুমরে গুমরে কেঁদেছি। গান থেকে বিরত থেকেছি এই সংসারটা আঁকড়ে ধরবো বলে। এমনকি কয়েকবার সুইসাইড করতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। আমি কোনোটাই পারলাম না। সবাই আমার আর আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন, আমি আর কিছু বলতে পারছি না (কিছু না বলে শুধুই কাঁদলেন)।
কিছুক্ষণ পর আবার শুরু করলেন সালমা…
লাস্ট একটা কথাই বলবো, আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। আমার পুরো পৃথিবীজুড়েই ছিল সে। তার কী একটিবারও মনে হচ্ছে না- আমার ছোট্ট বউটাকে ও মেয়েকে কেন হাসির পাত্র বানাচ্ছি?
আজ থেকে ৭ দিন আগে আমাদের ডিভোর্স হয়েছে। তার কথা ভেবে আমি কাউকে বলিনি। সামনে নির্বাচন, এটা প্রকাশ হলে হয়তো তার ক্ষতি হবে। অথচ সে-ই তার লোকজন দিয়ে বাজে বাজে সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে।
এখন কী করবেন?
আমি গানের সঙ্গেই থাকবো। এলএলবি পড়ছি। স্নেহা (একমাত্র মেয়ে) আমার একমাত্র অবলম্বন। আমি বিয়ের কথা আর ভাবছি না। আমার বাবা-মাও আমার কাছে সন্তান। তাদের নিয়েই ভালো থাকতে চাই।
পাঠকের মতামত