দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের প্রথম সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল অপারেটর সিটিসেল আবারও কলরেটে সাশ্রয়ী সুবিধা নিয়ে ফিরছে। ২৫ পয়সা মিনিটে কথা বলার সুযোগসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবারও বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সম্প্রতি সিটিসেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অতীতে তাদের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ নিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির চিফ স্ট্রেটিজিক অ্যাডভাইজার মেহবুব চৌধুরী জানান, ২০১৬ সালে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরেও প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসির সাথে নিয়ম মেনে কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী। এ ছাড়া, লাইসেন্স পুনর্বহালের মাধ্যমে গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদানের পরিকল্পনাও করছেন তারা।
বিটিআরসিকে পাঠানো এক চিঠিতে সিটিসেল জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে কর্মচারী, ঋণ এবং করসহ সরকারের প্রাপ্যও বকেয়া রয়েছে। তারা প্রযুক্তি নিরপেক্ষ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, যা ফাইভজি সেবা অন্তর্ভুক্ত করে আরও উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানিয়েছেন, সিটিসেলের আবেদন পর্যালোচনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে মোবাইল ফোন প্রবর্তনের জন্য বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিসিএল) তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বরাদ্দ লাভ করে। লাইসেন্স নেওয়ার পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে এর নাম বদলে হয় হাচসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড। ১৯৯৩ সালে এটির মালিকানায় আবার পরিবর্তন আসে। বিএনপির সাবেক সিনিয়র নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মটরস ও ফারইস্ট টেলিকম মিলে এইচবিটিএল-এর শেয়ার কিনে নেয়। কোম্পানির নাম বদলে হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড ও সিটিসেল নামে ব্র্যান্ডিং শুরু হয়। ২০০৪ সালে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল। ২০০৭ সালের শেষের দিকে সিটিসেল নতুন লোগো উন্মোচন করে। গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের রোষানলে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ওই বছরের ২০ অক্টোবর বিটিআরসি কোম্পানিটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এ সময় এর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ লাখের কিছু বেশি। ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিটিসেলের তরঙ্গ আবার খুলে দেওয়া হয়। যা ৬ নভেম্বর আবার বন্ধ করা হয়। ২০২৩ সালে সিটিসেলের লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়।
সিটিসেল বন্ধের সময় বিটিআরসির এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা ছিল ৪৭৭ কোটি টাকা। পরে ২৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে সিটিসেল। সে হিসাবে সিটিসেলের বকেয়া ২৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু কোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দেখা যায়, সিটিসেলকে ১০ মেগা হার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৮ দশমিক ৮২ মেগা হার্জ। সে হিসাবে সিটিসেলের কাছে সরকারের সবশেষ মোট বকেয়ার পরিমাণ ১২৮ কোটি টাকা।
পাঠকের মতামত