জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) বাংলাদেশের সংকটের এ সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে সরকারকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
এতে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সব নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২৮ অক্টোবর সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনায় রাজপথের বিরোধী দল এবং ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত করেছে জাতিসংঘ।জেনেভা থেকে পাঠানো জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের এ বিবৃতিতে সংস্থাটির মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল এ ইঙ্গিত করেন।
লিজ থ্রোসেল বলেন, ‘অভিযোগ রয়েছে, ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের বিক্ষোভকারীরা প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকের বাসভবনে হামলা চালায় এবং অন্তত ৩০ সাংবাদিককে মোটরসাইকেলে আরোহণকারী মুখোশধারীরা লাঞ্ছিত করে, যারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে ধারণা করা হয়। বিক্ষোভ ঘিরে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশ যখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সব রাজনৈতিক পক্ষকে এটিই বলতে চাই, সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়। সহিংসতা তৈরি করতে পারে– এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড ও বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাই।’
২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর দেশজুড়ে বিরোধীদের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্য, বিরোধী দলের ছয়, ক্ষমতাসীন দলের এক ও দু’জন রয়েছেন পথচারী। বিবৃতিতে বলা হয়, বিরোধীদের বিক্ষোভের জবাবে পুলিশ রড, লাঠি, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এ ছাড়া পুলিশ সারাদেশে বিরোধী দলের সমর্থকদের বাড়িতে তল্লাশি, কয়েকশ নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিচারে আটক-গ্রেপ্তার করে। জাতিসংঘ প্রয়োজন ছাড়া পুলিশকে যে কোনো বলপ্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। সব নিহত ও গুরুতর আহতের ঘটনাগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে বিস্ফোরক আইনে মামলা দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের ভয়ে বিরোধী দলের আরও কিছু সিনিয়র নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। এমন সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা রোধে সর্বোচ্চ সংযম এবং নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের পরে সব বাংলাদেশির জন্য মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান লিজ থ্রোসেল।
পাঠকের মতামত