‘ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কিবা মৃদু বায়/ তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়’– কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের মতো চট্টগ্রামের এক বাগানে উঠেছে ফুলের এমন হিল্লোল। দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলগাছ নিয়ে ‘বাসর’ সেজেছে ডিসি পার্ক। দুবাইয়ের মিরাক্কল গার্ডেনের আদলে এবারের ফুল উৎসব তৃতীয়বারের আয়োজন।
গতকাল শনিবার মাসব্যাপী এই ফুলমেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া সংযোগ সড়ক বন্দর-ফৌজদারহাট টোল রোড। ঝাউগাছ ও জলাশয়কে সাক্ষী রেখে এই সড়কটি যুক্ত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ হয়ে আউটার রিং রোডের সঙ্গে। এ সড়ক ধরে একটু এগোলে চোখে পড়ে ডিসি পার্ক। দূর থেকে যেখানে চোখে পড়ে বিশালাকার এক সাদা পাখির পিঠ। লাল-সাদা-বেগুনি ও গোলাপি ফুলে সাজিয়েছে সে তার দেহখানি। ফুলে আবৃত তার দেহ, পাখা আর লেজ বেয়ে নেমে এসেছে মাটিতে। এই ‘বক’ দেখে একটু এগোলে চোখে পড়ে এক সবুজ ‘প্রজাপতি’। আকৃতি প্রজাপতির হলেও সে সেজে আছে বাহারি নানা ফুলে। ডিসি পার্কের মাঠজুড়ে ফুলের এমন দোল নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের।
আয়োজকদের প্রত্যাশা, এবার অন্তত ১২ লাখ মানুষ মাসব্যাপী এই মেলার সৌন্দর্য উপভোগ করবে। গতবার এই মেলাতে দর্শনার্থী ছিল প্রায় ৯ লাখ। পার্কের কাউন্টার ছাড়াও দর্শনার্থীরা অনলাইনে টিকিট কেটে ফুল উৎসবে যোগ দিতে পারবেন। এবার টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
যশোর, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, দিনাজপুর, খুলনা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে এসব ফুলগাছ। টানা কয়েক দিনের পরিচর্যাতে সেসব গাছে এখন ফুটেছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ নানা রঙের ফুল। এর সঙ্গে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা, ঘুড়ি, বই ও পিঠা উৎসব; লেজার লাইট, ভিআর গেইম, মুভি ও ভায়োলিন শো এবং পুতুলনাচসহ আরও নানা আয়োজন।
আগেরবারের মতো এবারও ফুল উৎসবে গাছ সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে ইফা ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মা। এর মালিক কাউসার আল ইমরান বলেন, ‘দেড় মাস ধরে ফুল উৎসবের প্রস্তুতি চলেছে। শতভাগ কাজ শেষ করে উদ্বোধন হয়েছে এই মেলার। উৎসবে যেসব ফুল রাখা হয়েছে তার বেশির ভাগই বিদেশি প্রজাতির শীতকালীন। ২৫ ধরনের গোলাপ, স্টকস, গ্যাজানিয়া, ক্যামেলিয়া, হলিহক, স্নেক, নেসটিয়াম, লিলিয়াম, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার মতো ফুল রয়েছে। এই গাছগুলোতে তিন মাস ধরে ফুল ফোটে। দুই সপ্তাহের মধ্যে উৎসবে আসবে টিউলিপও। শীত যত বেশি হয়, টিউলিপ তত ভালো হয়। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান এই গাছ আমদানি করে। কয়েক দিনের মধ্যে সেসব গাছে ফুল ফুটবে। তাদের কাছ থেকে ওগুলো আনা হবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য হচ্ছে মেজবান। এটা বছরের পর বছর ধরে চলছে। একইভাবে যদি ফুল উৎসব টিকিয়ে রাখা যায়, আগামীতে এটা ঐতিহ্যে রূপ নেবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, ‘সমাজে ভালোবাসার নতুন বারতা নিয়ে আসে ফুল।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘আমরা মানুষকে যখন আশীর্বাদ জানাই তখন বলি, তোমার জীবন ফুলের মতো সুন্দর হোক। তাই তো ফুল উৎসব। আগে এখানে মাদকের অভয়ারণ্য ছিল, এখন সৌরভ ছড়াচ্ছে ফুল।
পাঠকের মতামত