নগদ সংকটে যখন গ্রাহকের আস্থাহীনতায় ব্যাংক খাত; তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, ৮-৯টি বাদে দেশের ৪৬টি ব্যাংকেই রয়েছে অতিরিক্ত তারল্য। সবল ব্যাংকগুলো বলছে, তাদের বাড়তি অর্থ রয়েছে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে। এজন্যই সম্ভব হচ্ছে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দুর্বল ব্যাংকের পাশে দাঁড়ানো। তবে উদ্বৃত্ত অর্থের ব্যবহার কতটা সঠিকভাবে হচ্ছে তা নজরে রাখা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। আর দুর্বল ব্যাংকের তারল্য সংকটও শিগগির কেটে যাওয়ার কথা জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নগদ অর্থ সংকটে সরগরম যখন ব্যাংকপাড়া তখন কোনো কোনো ব্যাংকে প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে গ্রাহকরা জানাচ্ছেন স্বস্তির কথা। তারা বলছেন, তারল্য সংকট কেটেছে অনেকটাই। ব্যাংকগুলো থেকে উত্তোলন করা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষে দেশের শরিয়াহভিত্তিক চারটি ও প্রচলিত ধারার ৪২টিসহ সরকারি-বেসরকারি মোট ৪৬টি ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংকট তো নেই-ই বরং রয়েছে উদ্বৃত্ত তারল্য
এই উদ্বৃত্ত অর্থ আবার বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান সবল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। স্যোশাল ইসলামি ব্যাংক পিএলসির (এসআইবিএল) এমডি মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ বলেন,
ব্যাংকের কাছে টাকা নেই, বিষয়টি এমন না। কিন্তু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় গ্রাহকরা একবারে বেশি পরিমাণ টাকা উত্তোলন করতে চাওয়ার ফলে কোনো কোনো ব্যাংক পরিশোধ করতে পারছে না।
আর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকেরই পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তবে ব্যাংক তারল্য ধরে না রেখে বিনিয়োগ করছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকেও সহায়তা করছে।
তারল্য সংকটের নানা খবরে টালমাটাল ব্যাংক খাতের অর্থ কতটা সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করা হয়েছে বা ঋণ দেয়ার ভিত্তি যেন আগের মতো ভুলে ভরা তথ্যে সাজানো না হয়; সেদিকে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন,
ব্যাংকে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তবে সেটি সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবহার করতে হবে।
এরই মধ্যে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দুর্বল ব্যাংকের পাশেও দাঁড়িয়েছে অর্থ-বিত্তে স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় ৮ থেকে ৯টি ব্যাংকের তারল্য সংকট শিগগিরই কেটে যাবে বলে আশা বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য ধার দিতে রাজি হয়েছে সবল ব্যাংকগুলো। সে অনুযায়ী তারল্য সরবরাহও হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকের তারল্য সংকট শিগগির কেটে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থ সংরক্ষণ করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এর পরে রয়েছে অগ্রণী, রূপালী, জনতা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)।