চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান উপজেলার বাইন্ন্যা পুকুড় এলাকার অদূরে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন ‘সাহেব বিবি মসজিদ’। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সাহেব বিবি মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল মোগল আমলে। সারা চট্টগ্রামে বেশ পরিচিত এ মসজিদটি দেখতে অনেক মানুষ সেখানে আসে। কেননা দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসেও এখানে নামাজ আদায় করেন। এটি একটি দর্শনীয় মসজিদ।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর পত্নী ও চট্টগ্রামের আলোচিত সুপ্রসিদ্ধ মালকা বানুর মাতা সাহেব বিবি এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা যার কারণে তার নামেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছিল।
৩০ শতক জমির ওপর চুন সুরকির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি। রাউজান উপজেলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সাহেব বিবি জামে মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে আটটি পিলার, তিনটি দরজা, দুইটি জানালা ও সুউচ্চ একটি গম্বুজের উপর। মসজিদের পশ্চিম পাশেই রয়েছে সুদীর্ঘ একটি মিনার। প্রশস্ত জায়গার উপর নির্মিত মসজিদের সামনে রয়েছে পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা আকর্ষণীয় একটি প্রবেশদ্বার। মসজিদের পাশেই রয়েছে ফুলের বাগান সংবলিত কবরস্থান। সেই কবরস্থানেই ঐতিহ্যবাহী সাহেব বিবি জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুমা সাহেব বিবি’কে সমাধিস্থ করা হয়। এর সামনে নির্মাণ করা হয়েছে ঈদগাহ। ডান পাশে রয়েছে বিশালাকার এক শাহী পুকুর। এটি ‘সাহেব বিবির দিঘি’হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত।
তৎকালে ঐতিহাসিক সাহেব বিবি মসজিদসহ বাদশা মুহাম্মদ শাহ এস্টেটের আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম আরও মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই ২২টি মসজিদের মধ্যে সর্বপ্রথম সাহেব বিবি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিক সাহেব বিবি মসজিদ চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে সুপ্রাচীন মসজিদ হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে। যার কারণে নান্দনিক এই স্থাপনাটি এক নজর দেখতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের বহু মানুষ। মসজিদটিতে প্রায় শতাধিক মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।
লোকমুখে শোনা যায়, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে তৎকালীন বাদশাহ ৮ মাইল হেঁটে এ মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতেন।
এদিকে সাহেব বিবি মসজিদের পাশাপাশি ডাবুয়া আমির চৌধুরী জামে মসজিদটিও একই আমলে করা। তবে আমির চৌধুরী মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন নির্মাণ করায় সে পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।